কর আদায়ে করদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করা যাবে না। তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে হবে। কর কর্মকর্তাদের এমন পরামর্শ দিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। তবে জোরপূর্বক আদায় করা যাবে না। গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশন অর্থ আইনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করে আনা আনীত পরিবর্তনের ওপর এ সেমিনারের আয়োজন করে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারি খরচ ও অন্য ব্যয় নির্বাহে সরকারের এই মুহূর্তে অর্থের প্রয়োজন। তবে কোনো অর্থের অপচয় যেন না হয়। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমবে না। বাজেটের বড় অংশ বাইরে থেকে ঋণ হিসেবে আনতে হয়। দিন দিন ঋণের বোঝা বাড়ছে। নিজেদের অর্থের সংস্থান করার চেষ্টা করতে হবে।বিগত সময়ে পরমুখাপেক্ষী হওয়ার বিপদ অন্তর্বর্তী সরকার টের পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ড. সালেহউদ্দিন বলেন, দাতা সংস্থারা ডান দিকে যেতে বললে আমাদের যাওয়ার কথা বাঁ দিকে, বাঁ দিকে গেলে যাওয়ার কথা ডান দিকে। যদিও তা অনেক সময় সম্ভব হয় না। আমরা চাই না তাদের ওপর নির্ভরশীল হতে। কারণ আগের পরিস্থিতি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। তিনি বলেন, দেশে প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ কর আদায় বেশি। প্রত্যক্ষ কর দিতে হয় আয়ের ওপর। যেমন রুটির দাম বাড়লে-কমলে কোটিপতিকে যে দামে কিনতে হয়, গরিবকেও একই দামে কিনতে হয়। ফলে এ ক্ষেত্রে সবাইকে সমান হারে পরোক্ষ কর বা ভ্যাট দিতে হয়। সরকার এটি চায় না। ধনীদের ওপর আরও কর আরোপ হওয়া উচিত।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ খুব একটা পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্বের ওপর নির্ভর করতে হবে। দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হবে রাজস্ব আদায়ে। প্রত্যক্ষ কর ফাঁকি দেওয়া যায় না। পরোক্ষ করে ঝামেলা আছে। তবে কষ্ট দিয়ে কারও কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা যাবে না।এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন এনবিআর পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করছে না। দীর্ঘদিন ধরে ঘাটতি বাজেট হচ্ছে। ঋণ বাড়ছে। ফলে পরবর্তী জেনারেশনের ওপর দেনার দায় বাড়ছে। অন্যদিকে বিজ্ঞজনরা বলেন, অনেক টাকা অপচয় হয়, অপব্যয় হয়। এ কারণে করদাতারাও বিরক্ত হন। উন্নত দেশের করদাতারা যে ধরনের সেবা পান, তারা সে ধরনের সেবা সরকারের কাছ থেকে পান না।কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, করদাতাদের উন্নত সেবা ও সম্মান দিতে হবে। করদাতারা ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন। সুতরাং বেসরকারি খাতকে সুবিধা দিতে হবে, যাতে করদাতার সংখ্যা বাড়ে। তবে জোর করে কর আদায় করা যাবে না। কর আইন পরিপূর্ণভাবে পরিপালন করে কর আদায় করতে হবে। যাতে কারও ওপরে জুলুম না হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর আইনের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার হবে দুই ধরনের। প্রচুর করছাড় দেওয়া হয়েছে, যা কমাতে হবে। আবার এই করব্যয় কমানোর জন্য সাধারণ করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত দায় চাপানো যাবে না। চেয়ারম্যান বলেন, কর বিষয়ে আইনকানুন ব্যবসাবান্ধব করতে হবে। ২০১২ সালে মূসক আইন হয়েছে বাংলায়। গত বছর নতুন আয়কর আইন ও কাস্টমস আইন হয়েছে। মূসক আইন হয়েছে ১২ বছর হলো। এখনও এই আইনের ইংরেজি ভার্সনের গেজেট হয়নি। বাংলাদেশে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যাদের ভ্যাট এবং আয়কর দিতে হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যারা বিনিয়োগ নিয়ে এসেছেন, তারা কীভাবে পরিকল্পনা করবেন? কেননা তারা তো বাংলা আইন পড়বেন না, বুঝবেন না। তাই আগামী এক মাসের মধ্যে এই তিনটি আইনের সঠিক ইংরেজি ভার্সন করতে হবে।