ইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসের
No icon

বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তা পেতে অনিশ্চয়তা

বাংলাদেশের জন্য চলতি জুনের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের (ডিপিসি) আওতায় শেষ কিস্তি হিসেবে যে ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার অর্থ ছাড় করার কথা ছিল, সেই অর্থ এ সময়ের মধ্যে পাওয়ার সম্ভাবনা এখন কম বলে জানা গেছে।

বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্ত পূরণে বিলম্ব হওয়া এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের সঙ্গে ওই সব শর্ত সমন্বয় করার পরিকল্পনার কারণে আগামী জুন মাসের মধ্যে ডিপিসির ২৫ কোটি ডলার তহবিল ছাড় নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে কর্মকর্তারা বলছেন যে সরকার এখন ২৫ কোটি ডলারের একটি তহবিল অন্য খাত থেকে পেতে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে বাস্তবায়নে গতি কম বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট এমন ছয়টি প্রকল্প থেকে অর্থ আনতে চায় সরকার। এ নিয়ে এরই মধ্যে এক দফা বৈঠকও হয়েছে।

ডিপিসির আওতায় সব মিলিয়ে ৭৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। এ পর্যন্ত দুই কিস্তিতে ৫০ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। কথা ছিল, বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ কিস্তির ২৫ কোটি ডলার পাবে।

আইএমএফ শর্তের সঙ্গে সমন্বয়
বিশ্বব্যাংকের এ বাজেটে সহায়তা পেতে মোটাদাগে ১২টি শর্ত আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো  ব্যাংক কোম্পানি আইন চালু করা এবং ট্যারিফ নীতির অনুমোদন দেওয়া। বড় শর্তগুলোর মধ্যে এই দুটি শর্ত পূরণ বাকি ছিল। বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তা কিস্তি ছাড়ের নিয়ম হলো, যখন সব শর্ত পূরণ হবে, তখন শেষ কিস্তির অর্থ ছাড় হবে।

এরই মধ্যে সরকার আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা কর্মসূচিতে গেছে এবং দাতা সংস্থাটি ইতিমধ্যে প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড়ও করেছে। ঋণ অনুমোদনে সময় দেওয়া আইএমএফের শর্তগুলো পূরণে একটি সময়সীমা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

আইএমএফের শর্তের অন্যতম হলো আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন। সরকারের পরিকল্পনা হলো, আইএমএফের শর্তের সঙ্গে মিলিয়ে আগামী জুলাই মাস থেকে সংশোধিত আইন কার্যকর করা। ফলে যেহেতু নতুন অর্থবছর শুরুর আগে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই জুনের আগে বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তার ২৫ কোটি ডলার পাওয়ার এ শর্ত পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ট্যারিফ পলিসি অনুমোদনের শর্তটিও আইএমএফের শুল্ক-কর অব্যাহতি কমানোর শর্তের কারণে আটকে গেছে। ট্যারিফ পলিসি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু শুল্ক-কর অব্যাহতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

তবে আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে এনবিআর ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটি কোন খাতে কত শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, কীভাবে অব্যাহতি কমানো যায়, তা নিয়ে বাজেটের আগেই প্রতিবেদন তৈরি করবে। ফলে ট্যারিফ কমিশনের ট্যারিফ পলিসির সঙ্গে এনবিআরের প্রতিবেদন সমন্বয় করতেও কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। তাই আগামী জুন মাসের আগে ট্যারিফ পলিসি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এ বিষয়ে ইআরডির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এক প্রকল্প থেকে না পাওয়া গেলে আরেক প্রকল্পের অর্থ ব্যবহার অতীতেও হয়েছে। বিশ্বব্যাংক যেহেতু বাংলাদেশের জন্যই অর্থ বরাদ্দ করেছে, তাই এখন আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিকে এই অর্থ অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা চলছে।

অর্থ কোথায় পাওয়া যাবে
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট কম অগ্রগতির ছয়টি প্রকল্পের পরিচালকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছে। ওই ছয়টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশের কম। তাই এসব প্রকল্প থেকে সরকার ২৫ কোটি ডলার অন্য খাতে নিতে চায়।

এ ছাড়া আগামী জুন মাসের মধ্যে গ্রিন, রেসিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট (গ্রিড) শিরোনামের নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে আরও প্রায় ৭৫ কোটি ডলার নতুন বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনায় প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। এই কর্মসূচির আওতায় আগামী জুনের মধ্যে প্রথম কিস্তির ২৫ কোটি ডলার পাওয়ার কথা আছে। সেই ২৫ কোটি ডলারের সঙ্গে কম বাস্তবায়ন হওয়া বিভিন্ন প্রকল্প থেকে আরও ২৫ কোটি ডলার মোট ৫০ কোটি ডলারের ছাড় চায় বাংলাদেশ।

কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ডিপিসির ২৫ কোটি ডলার ছাড়ের অনিশ্চয়তা পুষিয়ে নিতেই সরকারের এ উদ্যোগ ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট কম বাস্তবায়ন প্রকল্পগুলোর মধ্য থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটিজ প্রকল্প থেকে ১০ কোটি ডলার নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে সব মিলিয়ে ৩৫ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। ২০১৭ সালে শুরু হয়ে এ প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ গত বছরের জুনে শেষ হয়ে গেছে। তবে এ প্রকল্পে বরাদ্দ করা পুরো অর্থ এখনো খরচ না হওয়ায় সরকার বাকি অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করতে চায়।

এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে ছোট ছোট সেতু নির্মাণের একটি প্রকল্প থেকে সাড়ে আট কোটি ডলার নিতে চায় সরকার। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক সাড়ে ৪২ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হবে। কিন্তু এটিরও বাস্তবায়ন ১০ শতাংশের কম।

বাকি সাড়ে সাত কোটি ডলার প্রাণিসম্পদ, শিক্ষা, অবকাঠামো খাতের আরও কিছু কম অগ্রগতির প্রকল্প থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব অর্থ বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ থাকলেও এক প্রকল্প থেকে আরেক প্রকল্পে ব্যবহার করতে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভার অনুমোদন লাগবে বলে ইআরডি সূত্রে জানা গেছে।