জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলমান আন্দোলনের পেছনে একটি সুসংগঠিত, সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তাদের গোষ্ঠী সক্রিয় ভূমিকা রাখছে—যারা পূর্ববর্তী সরকারে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বারবার পদোন্নতি, বদলি রদ, আর্থিক ও প্রশাসনিক সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। সরকারের চলমান কাঠামোগত সংস্কারের মুখে পড়েই তারা এখন এই ‘আন্দোলন’ নামক চাপ তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন বলে তথ্য উঠে এসেছে।
এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, এই আন্দোলন রাষ্ট্রের প্রশাসনিক অঙ্গনে একটি শক্তিশালী সুবিধাভোগী নেটওয়ার্কের প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান সংস্কারে এনবিআরের কাঠামো পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের ক্ষমতা-নির্ভর পোস্টিং ও ‘চেনাজানা সুবিধা’ পেতে থাকা কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ব কমে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই পরিবর্তনের খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। গত মার্চ থেকেই গোপনে মিটিং, টেলিগ্রাম গ্রুপ, গোপন বৈঠক ও যৌথ বিবৃতির প্রস্তুতি শুরু হয়।
গত ২০ জুন থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচির আওতায় এনবিআরের অধীন কর্মকর্তারা নানা অফিসে কর্মবিরতি, ফাইল আটকে রাখা, এবং জনসেবা ব্যাহত করার কৌশল নেন।
বিশেষত কাস্টমস ও ভ্যাট দপ্তরে আমদানি-রপ্তানির অনুমোদন, কর ফাঁকি মামলার শুনানি, ও বড় করদাতাদের রিফান্ড আটকে দেওয়া হয়।
ফলে সরকার দৈনিক গড়ে ৬০০–৭০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে প্রাথমিক হিসাব। এর কিছু অংশ কখনোই পুনরুদ্ধারযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক কর কমিশনার।
বিশ্লেষকদের মতে, এটিকে শুধুমাত্র “নীতিগত মতবিরোধ” বলা যাবে না। এটি একটি সংগঠিত প্রশাসনিক প্রতিরোধ, যেখানে একদল কর্মকর্তা নিজেদের পুরোনো সুবিধা ও অনিয়মের সুযোগ টিকিয়ে রাখতে একটি বৈধ কর্মসূচিকে ছদ্মবেশ হিসেবে ব্যবহার করছেন।
এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, “আমার মনে হয় এটি ‘সরকার বনাম আমলা’ বিষয় নয়—বরং ‘স্বচ্ছতা বনাম সুবিধাভোগী চক্রের’ দ্বন্দ্ব। এই চক্রটা আগে রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করত, এখন ব্যুরোক্র্যাটিক কাঠামোকে ঢাল হিসেবে নিচ্ছে।”
এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশই ২০১০–২০২২ মেয়াদে একাধিকবার অস্বাভাবিকভাবে পদোন্নতি পেয়েছেন, বদলি রদ করেছেন বা নিয়ম লঙ্ঘন করে এক জেলায় ৬–৮ বছর থেকেছেন।