যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকারবিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিত থাকলে ব্যবস্থা নেবে এনবিআর‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ চলবেচলমান আন্দোলনে রাজস্ব আদায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে : আবদুর রহমান খানরাজস্ব ফাঁকি: এনবিআরের ৯ মাসে আদায় ৯৯৪ কোটি টাকা
No icon

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক থেকে রেহাই পেতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে চুক্তির একটি খসড়া বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। খসড়ার ওপর মতামত ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছে ঢাকা। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) বৈঠক হয়েছে। দরকষাকষির পর আগামী ২৯ জুন রোববার উভয় দেশের মধ্যে আরও একটি বৈঠকের পর চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এ চুক্তির আওতায় বাড়তি শুল্ক কমানো সম্ভব বলে মনে করছে সরকার।গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করা হয় ৩৭ শতাংশ। তবে ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। এর মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৮ জুলাই। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চুক্তির খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কিছু কঠিন প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনকানুনের মধ্যে থেকে বাংলদেশ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ওপরই বেশি জোর দিয়ে মতামত দিয়েছে। কারণ, বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। মতামতে জানানো হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে এমন অন্তত ৪১ পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি আনার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্য, তুলা, প্রোপেন বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), সয়াবিন তেল, গম, এলএনজি উল্লেখযোগ্য।

এদিকে বাংলাদেশের শুল্ক তালিকায় বর্তমানে ১৯০টি পণ্যের ওপর শুল্কহার শূন্য, অর্থাৎ কোনো শুল্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আনা আরও সাশ্রয়ী করতে এবারের বাজেটে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক ছাড় এবং সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার ও ছাড় দেওয়া হয়েছে। শুল্ক প্রত্যাহার করা পণ্যের উল্লেযোগ্য হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সুতা, কাপড়, পেট্রোলিয়াম, কম্বাইন হার্ভেস্টার, কৃষি যন্ত্রপাতি, পোলট্রি ইনকিউবেটর, চিনি পরিশোধন যন্ত্রপাতি, বেকারি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারসহ আরও কিছু ক্ষেত্রে কর হার কমানো হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি কেনাকাটা বাড়ানোর উদ্যোগের বিষয়টিও মতামতে জানানো হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি আমদানির চুক্তির আওতায় বাড়তি আরও ১ বিলিয়ন ডলারের এলএনজি আমদানি করা হবে। তুলা আমদানিতে বাংলাদেশে ওয়্যারহাউস স্থাপনের কথায় চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ওয়্যারহাউসে ৪৫ দিন পর্যন্ত তুলা সংরক্ষণ করা যাবে। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ৩ লাখ টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব গম আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সামরিক সরঞ্জাম এবং উড়োজাহাজ কেনা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, পাল্টা শুল্ক আরোপের পর থেকেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। তাদের প্রতিটি চিঠির জবাবে বাংলাদেশের পদক্ষেপ জানানো হচ্ছে। পাল্টা শুল্ক-সংক্রান্ত চুক্তির খসড়ার ওপর বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে মতামতও পাঠানো হয়েছে। শিগগির বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে তিনি আশা করেন। গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশকেও এ পথেই হাঁটতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়ার ওপর বিশেষজ্ঞ এবং স্বার্থসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতামত নিয়ে বাংলাদেশের কৌশল নির্ধারণ করলে ভালো হতো। তিনি আশা করেন, এ ধরনের চুক্তি করার সময় সরকার দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।