
ভারতের শিল্পপতি অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ-পাচারের অভিযোগ এনেছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এর জেরে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে অনিল আম্বানির দিল্লি, মুম্বাইসহ মোট ৩৫টি দফতরে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে ইডি।
ইডি সূত্রের খবর, অনিল আম্বানির সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা ও অর্থ তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যেই ৫০টির বেশি সংস্থা ও ২৫ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে অনিল আম্বানির অধীনে থাকা কোম্পানিগুলোর নামে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করানো হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে ইডি।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সূত্রের বরাতে ইডি জানায়, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বেসরকারি ইয়েস ব্যাংক অনিলের সংস্থা ‘রাগা’ গোষ্ঠীর বিভিন্ন কোম্পানিকে তিন হাজার কোটি রুপি ঋণ দিয়েছিল। তার বিনিময়ে ইয়েস ব্যাংকের তৎকালীন কর্তারা নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হয়েছিলেন। ইডির দাবি, ওটা ছিল ‘দেওয়া-নেওয়া চুক্তি’ বা ‘কুইড প্রো কো’।
এছাড়া, ঋণের টাকা শেল কোম্পানি ও অন্যান্য গ্রুপ সংস্থায় পাঠানো হয়েছে, যা মূল ঋণের শর্তাবলির লঙ্ঘন।
ইডি আরও জানিয়েছে, যেসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দুর্বল, যাদের ঠিকানা ও পরিচালক এক বা অভিন্ন, তাদের ঋণ দেওয়া হয়েছে; সঠিক নথিপত্র নেই; কর্পোরেট ঋণকে ‘এভারগ্রিনিং’-এর মাধ্যমে চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিছু ঋণ মঞ্জুর হওয়ার আগেই টাকা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু ঋণ মঞ্জুরের দিনই টাকা ছাড়া হয়েছে।
মুম্বাই এবং দিল্লিতে ৫০টি কোম্পানি, ৩৫টিরও বেশি ভবন এবং অন্তত ২৫ জন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আর্থিক তছরূপ প্রতিরোধ আইনের (পিএমএলএ) অধীনে তল্লাশি চালায় ইডি৷ তদন্ত আরও প্রসারিত হবে বলে সূত্রের দাবি।
তদন্তের ভিত্তি দুটি সিবিআই মামলা, যেখানে বড় মাপের আর্থিক অনিয়ম ও ব্যাংক ঋণের অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। ইডির তদন্তে জাতীয় হাউজিং ব্যাংক, সেবি, ন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অথরিটি এবং ব্যাংক অফ বরোদার কাছ থেকেও তথ্য নেওয়া হয়েছে।
সূত্রের দাবি, এই পুরো ঘটনাটি ছিল ‘পরিকল্পিত প্রতারণা’, যার মাধ্যমে ব্যাংক, বিনিয়োগকারী, শেয়ারহোল্ডার ও সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতারণা করে ঋণের অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে।
ইডির তরফে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ইতোমধ্যেই দু’টি এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই ৷ অভিযোগের কপিতে উল্লেখ রয়েছে, আর্থিক তছরুপ ও দুই ব্যাংকে ঋণের জালিয়াতির ঘটনার কথা ৷
অর্থলগ্নি নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) সঙ্গে অনিল আম্বানির বিভিন্ন সংস্থার বিরোধ চলছে। গতকাল বুধবার এসবিআই অনিল আম্বানি ও তার সংস্থাগুলোকে সরাসরি ‘প্রতারক’ বলে অভিহিত করেছিল। এই শিল্পপতির বিরুদ্ধে এসবিআই নিজেরাই সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভেবে রেখেছে। এর মধ্যেই শুরু হলো ইডির তল্লাশি।