বাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডি
No icon

আলোচিত ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরু কাল

অবশেষে আগামীকাল (সোমবার) থেকে বাস্তবায়ন হচ্ছে বহুল আলোচিত নতুন ভ্যাট আইন। শনিবার অর্থবিল আকারে আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ২০১১ সালে এ আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। এরপর ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। নতুন আইনে ভ্যাটের একক হার নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তি থাকায় ২০১৭ সালের ১ জুলাই আইনটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনায় সেটি দুই বছরে পিছিয়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে আইনটি যুগোপযোগী করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে একক হারের পরিবর্তে ভ্যাটের ৪ স্তর করা হয়।

নতুন আইনে ভ্যাটের আওতা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। পুরনো ১৯৯১ সালের আইনে শুধু আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী স্তর এবং সেবার ওপর ভ্যাট ছিল। সেখানে নতুন আইনে আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী স্তর এবং সেবার সরবরাহ ও আমদানির ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। তা ছাড়া অস্থাবর সম্পত্তি, লিজ, গ্রান্ট, লাইসেন্স, পারমিট, অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদিও ভ্যাটের আওতায় আনা হয়েছে। নতুন আইনে একক নিবন্ধনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যদি কোনো ইউনিট বা বিক্রয় কেন্দ্র পৃথকভাবে হিসাব সংরক্ষণ করে, সেক্ষেত্রে ওই ইউনিটের জন্য পৃথক নিবন্ধন নেয়া যাবে। নতুন আইনে প্রত্যর্পণ (ডিউটি ড্রব্যাক) পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদফতর প্রত্যর্পণ দিত। সেখানে নতুন আইনে কমিশনাররা প্রত্যর্পণ ও রিফান্ড দিতে পারবেন।

অবশ্য নতুন আইনে ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ রাখা হয়। এছাড়া ট্যারিফ মূল্য ও সংকুচিত ভিত্তিমূল্য প্রথা বিলুপ্ত করা হয়। পুরনো আইনে ৭ স্তরে ভ্যাট ছিল। মূলত একক ভ্যাট হার, প্যাকেজ ভ্যাট ও ট্যারিফ মূল্য প্রথা বিলুপ্তের কারণে ব্যবসায়ীরা আইনটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। আন্দোলন শুরু করে সব শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা।

আইএমএফের পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তায় সরকারের তৈরি করা ভ্যাট আইনের মূল লক্ষ্য ছিল রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনা। অবশ্য আইনটি দ্রুত ভ্যাট বাস্তবায়নে আইএমএফের চাপও ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সরকার ভ্যাট আইনটি কার্যকর করতে পারেনি। ২০১৭ সালে আইনটি বাস্তবায়ন করা কথা থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের কথা বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুই বছরের জন্য বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি যুগোপযোগী করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ভ্যাট আইনে আমূল পরিবর্তন আনা হয়। একক হারের পরিবর্তে ৪ স্তরের ভ্যাট হার করা হয়। এগুলো হচ্ছে, ৫, সাড়ে ৭, ১০ ও ১৫। বিশেষ স্তর রয়েছে আরও ৪টি। এগুলো হচ্ছে- ২, ২ দশমিক ৪, ৩ এবং সাড়ে ৪ শতাংশ। আবাসন খাত, ওষুধ ও পেট্রোলিয়াম পণ্য এসব হারে ভ্যাট রয়েছে। এছাড়া টার্নওভার ট্যাক্সের আওতায় ও কর হার বাড়ানো হয়েছে। শুরুর দিকে বার্ষিক ২৪ লাখ টাকা বা তার কম টার্নওভার সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হয় এবং ২৪ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকার কম বার্ষিক টার্নওভারসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর আরোপ করা হয়। কিন্তু আইনটি ব্যবসাবান্ধব করে গড়ে তুলতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট অব্যাহতি সীমা ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া টার্নওভারের সীমা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা এবং ট্যাক্সের হার ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া ট্যারিফ মূল্য প্রথা বাতিল করে ট্যারিফ সুবিধাপ্রাপ্ত পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। ভ্যাটের আওতার বাইরে রয়েছে ১ হাজার ৪৩টি পণ্য ও সেবা। এসব পণ্যের বেশির ভাগই ভোগ্যপণ্য। ভ্যাটের আওতা বাড়াতে গিয়ে সরকার প্রায় পণ্য সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করেছে।

নতুন আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ইএফডি (ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) মেশিনের ব্যবহার নিশ্চিত করা। আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড, মিষ্টান্ন ভান্ডার, বিউটি পার্লার, তৈরি পোশাকের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ ২৪ ধরনের ব্যবসায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখতে হবে। অর্থাৎ নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী বার্ষিক লেনদেন ভ্যাটমুক্ত সীমার ওপরে উঠলেই ইসিআর মেশিন, ইএফডি, এসডিসি, পিওএস ব্যবস্থা থাকতে হবে।