উল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবে
No icon

ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে ভোক্তার মাথায় ‘বাজ পড়ার’ আশঙ্কা

আগামী ১ জুলাই কার্যকর হবে বহুল আলোচিত নতুন ভ্যাট আইন। আলোচিত এ আইনে ট্যারিফ ভ্যালু পদ্ধতি বাতিল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্যাকেজ ভ্যাট এবং সেবার কয়েকটি খাতে সংকুচিত মূল্য ভিত্তিতে ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হচ্ছে। রেয়াত সুবিধা রাখা হচ্ছে সীমিত আকারে। আর এসব উদ্যোগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়া এবং দেশীয় শিল্পে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর এতে সাধারণ ভোক্তারা প্রবল চাপে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। অবশ্য সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হলে ভোক্তাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বারবারই বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। ভোক্তাদের কোনো সমস্যা হবে না।

উত্তরসূরির মতো অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমান সরকার ভোক্তাদের স্বার্থে অব্যাহতির সীমা আরো বাড়াবে। এটা অনেক বড় ছাড়। ভোক্তাদের ওপর চাপ পড়ার কোনো কারণ আমি দেখি না।

সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরে ভ্যাট থেকে বড় রাজস্ব আয় আসবে বলে আশা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর এ জন্য ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তবে আইন কার্যকর নিয়ে চাপে রয়েছে সরকার। কারণ গত সাত বছরেও আইনটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আবার আইন বাস্তবায়নে করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের নাখোশ করতে চাইছে না সরকার। অন্যদিকে আয় বাড়ানোর পাশাপাশি জনগণ যাতে চাপে না পড়ে সেদিকেও দিতে হচ্ছে বিশেষ নজর।

কিন্তু নতুন আইনে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তাতে সাধারণ ভোক্তারা চাপে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আইনে ট্যারিফ ভ্যালু পদ্ধতি তুলে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে উৎপাদন পর্যায়ে ৮৫টি পণ্যে ট্যারিফ মূল্য বহাল আছে। এর মধ্যে কেক, বিস্কুট, রুটি, গুঁড়া দুধ, গুঁড়া মসলা, টমেটো সসের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রয়েছে। আরো রয়েছে এলপি গ্যাস, এলইডি লাইট, টিউব লাইটের মতো পণ্য। আবার প্রায় ১০০টির মতো দেশীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে বিশেষ ছাড় দিয়ে ট্যারিফ মূল্য ভিত্তিতে কম হারে ভ্যাট আদায় করা হয়। এসব পণ্যের মধ্যে ওষুধ, ভোজ্য তেল, লেখার কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট, নির্মাণ সামগ্রীর রড, ইট রয়েছে। নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে এসব পণ্যে ট্যারিফ মূল্য থাকবে না। ফলে এসব পণ্যের প্রকৃত দামের ওপর উৎপাদককে ভ্যাট দিতে হবে। উৎপাদক লাভ তুলে নিতে দাম বাড়াবে পণ্যের।

১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে আমদানি পর্যায়ে সর্বমোট এক হাজার ৪৩১ ট্যারিফ লাইনের বিপরীতে বিভিন্ন হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত ছিল। নতুন আইনে তা কমিয়ে আনা হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে যে আইনটি বাস্তবায়িত হবে সেটিতে মাত্র ২৫৬ ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক রাখা হয়েছে। এতে আমদানিনির্ভরতা বাড়বে। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা কমবে।

আবার নতুন আইনে প্যাকেজ ভ্যাট এবং সেবার কয়েকটি খাতে সংকুচিত মূল্য ভিত্তিতে ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হচ্ছে। উপকরণ ব্যবহারের বিপরীতে রেয়াত সুবিধাও রাখা হচ্ছে সীমিত আকারে। এতে করের বোঝা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এগুলো ছাড়াও বর্তমানে সেবা খাতের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ সংস্থা, আসবাব, স্বর্ণালংকার, তথ্য-প্রযুক্তিসহ সব মিলিয়ে ১৬টি খাত রয়েছে, যেগুলোর মূল্য সংযোজনের ওপর বা আংশিক মূল্যের ওপর ভ্যাট আহরণ করা হয়। নতুন আইনে এটিও বাতিল করা হতে পারে। নতুন আইনে প্রকৃত লেনদেনের ওপর ভ্যাট আরোপের কথা বলা হতে পারে। এটি কার্যকর হলে সেবা খাতের খরচ বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব টানতে হবে সাধারণ মানুষকে।