
আন্দোলনে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্বশীল আচরণ করলে ভয়ের (শাস্তিমূলক বদলি, সাময়িক বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর) কিছু নেই। তবে সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিষয় ভিন্নভাবে দেখার কথা জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান।
সোমবার ঢাকা কাস্টম হাউজে বিডিসিএস ও ডিএম সফটওয়্যার উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি। অনুষ্ঠানে ঢাকা কাস্টমসের কমিশনার জাকির হোসেনের নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভয় দেওয়ার জন্য ঢাকা কাস্টমসে এসেছি। প্রত্যেকে যদি দায়িত্বশীল আচরণ করে, তাদের কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে, তাহলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। আর কেউ কেউ হয়তো বড় আকারেরই সীমা লঙ্ঘন করেছে, সেটা হয়তো ভিন্নভাবে দেখা হবে। তবে সাধারণভাবে ভয়ের কোনো কারণ নেই।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু বিষয় আছে যেগুলো সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে এনবিআর-এর করার কিছুই নেই। এখন পর্যন্ত ৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন কতজন, হাজারেরও বেশি, সবার বিরুদ্ধেই কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।
কাস্টমসের শাটডাউনের ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কাস্টমস শাটডাউনে নিঃসন্দেহে ব্যবসায়ী, রাষ্ট্র- সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে ঘটনা ঘটেছে, এটা ছিল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। প্রত্যেকে আমরা যার যার মতো ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করব। ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ীদের মতো চেষ্টা করবেন, কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের মতো চেষ্টা করবেন।
সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের তথ্য তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ৩০ জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি আরেকটু বাড়বে। কারণ, সরকারি প্রকল্পের বুক অ্যাডজাস্টমেন্টগুলো নরমালি অর্থবছর শেষ হওয়ার পর এক-দুই সপ্তাহ লেগে যায়।
স্বাগত বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কাস্টম হাউজগুলোর অপারেশন অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে চলছে এবং সবকিছুই ইন অর্ডার আছে। কর্মকর্তাদের অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এবং আইনকানুন মেনে দ্রুততার সঙ্গে ফ্রেন্ডলিভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ, কাস্টম হাউজ হচ্ছে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের জায়গা, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো বিড়ম্বনার শিকার না হন, তারা যেন কোনো সমস্যায় না পড়েন, সেই দিকে লক্ষ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যেকে রাষ্ট্রের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকারকে সবার ওপর স্থান দেব। ব্যক্তিগত অথবা গোষ্ঠীগত স্বার্থ কখনো যদি রাষ্ট্রস্বার্থের সঙ্গে কনফ্লিক্ট করে, তবে আমরা সব সময় রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করব। আমি বা আমরা কেউই অপরিহার্য নই। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র অপরিহার্য।
এক সপ্তাহের মধ্যে শুল্ক পরিশোধে ই-চালান শতভাগ বাধ্যতামূলক করা হবে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এ ব্যাপারে এনবিআরের সিস্টেম অ্যানালিস্টরা কাজ করছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ পেমেন্ট ই-চালানোর মধ্যে চলে আসবে। সপ্তাহখানেক পরে চিঠি দিয়ে ই-চালান ব্যতীত অন্য উপায়ে পেমেন্ট নিতে নিষেধ করে দেব। ই-চালানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, অ্যাকাউন্ট থেকে এমনকি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারেন। এমনকি গাড়িতে বসেও ট্যাক্স পেমেন্ট করে পণ্য খালাস করে নিয়ে যেতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীরা বিদেশ থেকে আসার সময় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসেন, সেগুলো যাতে তারা ঝামেলামুক্তভাবে নিয়ে যেতে পারেন, সেজন্য একটা সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হয়েছে। তাছাড়া ব্যাগেজ রুলে একটা বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রবাসীরা বছরে ১০ ভরির মতো স্বর্ণ বিনা শুল্কে আনতে পারবেন। বিএমইটি কার্ডধারীরা দুটি মোবাইল ফোন আনতে পারবেন। এ সুবিধাগুলো যাতে প্রবাসীরা পান, সেজন্য একটি সফটওয়্যার করা হয়েছে। আরেকটি হচ্ছে- ডিটেশন মেমো সফটওয়্যার। যাতে জব্দ মালামাল ট্র্যাক করতে এবং পরবর্তী অ্যাসেসমেন্ট করতে সুবিধা হয়।