শুল্ক আরও কমানোর চেষ্টায় সরকারআয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য সরেজমিন তদন্ত করা হবে : এনবিআর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দরবৃদ্ধির শীর্ষে ইভেন্স টেক্সটাইলসরিটার্ন না দিলে আয়-ব্যয় ও সম্পদের তদন্ত হবে: এনবিআর চেয়ারম্যানএনবিআর কর্তৃক কর আইনজীবী সনদ ইস্যু চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট
No icon

শুল্ক আরও কমানোর চেষ্টায় সরকার

বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য আরেক দফা বৈঠকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কাছে সময় চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাল্টা শুল্ক অন্তত ১৫ শতাংশে নামিয়েই এ-সংক্রান্ত চুক্তি করতে চায় ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্কের হার কমিয়ে ২০ শতাংশ কার্যকর করলেও দেশটির সঙ্গে এখনও কোনো চুক্তি হয়নি।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট মাসেই যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ পারস্পরিক বাণিজ্যচুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও সার্বিক বিবেচনায় তা পিছিয়ে গেছে। কারণ বাংলাদেশ চায় শুল্ক আরও কমাতে, যুক্তরাষ্ট্রও কমানোর পক্ষের যুক্তিগুলোর যৌক্তিকতা পর্যালোচনায় সময় নিচ্ছে। একই সঙ্গে চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ করছে ইউএসটিআর। খসড়া তৈরি শেষ করার পর তারা তা বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা দেখে ও মতামত দিয়ে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্রে। এর পর দিন ঠিক করে যুক্তরাষ্ট্রে উভয় পক্ষের চুক্তি সই হবে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান   বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগে কথা হয়েছে। ওরা ১৫৬টি দেশের সঙ্গে ডিল করছে। কাজেই তাদের পক্ষে সময় বের করাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সময় দিলে আমরা যাব অথবা অনলাইনে আরেক দফা আলোচনা হতে পারে। ইউএসটিআরের দেওয়া সিডিউল অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আলোচনার পর চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি হওয়ার আগে ইউএসটিআরের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসতে পারে। গত ১২ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য সরকারের সব মহল থেকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়নি। দুই দেশের মধ্যে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো হবে।

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর প্রথমে ৩৭ শতাংশ এবং পরে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করে আলোচনার সুযোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনে তৃতীয় দফার আলোচনা শেষে গত ৩১ জুলাই ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করা হয়। তবে এ জন্য বাংলাদেশকে বেশ কিছু ছাড় দিতে হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণলয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে যেসব ছাড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তাতে করে পাল্টা শুল্ক অন্তত ১৫ শতাংশ বা আরও কম হবে এমনটি আশা করেছিল সরকর। জানা গেছে, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৬০০ কোটি ডলার থেকে কমাতে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেড় বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডলার আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এ জন্য আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কিনবে সরকার। এতে স্থানীয় মুদ্রায় খরচ হতে পারে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কিছুটা বাড়তি দামে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতিবছর সাত লাখ টন করে গম আমদানি করা হবে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক পণ্য, বেসামরিক উড়োজাহাজ যন্ত্রাংশ আমদানি বাড়াবে বাংলাদেশ এবং জ্বালানি তেল ও ভোজ্যতেল, গম ও তুলা আমদানি বাড়ানো এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা হবে। কিছু খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ওপর বাংলাদেশের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা বাংলাদেশ বাদ দেবে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের জন্য অনাপত্তিপত্রও সহজ করা হবে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধন যাতে সহজে আসতে পারে এবং বাংলাদেশ থেকে সে দেশে যেতে পারে, তার অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত ও স্বচ্ছ করতে বাংলাদেশ নির্দেশিকা প্রণয়ন করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ অবৈধ রপ্তানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ তদন্ত করবে। বাংলাদেশ এতে রাজি। এ ছাড়া জনমত গ্রহণের সুযোগ নিতে বাংলাদেশ আইন ও বিধিমালা অনলাইনে সহজলভ্য করার পাশাপাশি প্রস্তাবিত আইন ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্য বা কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি অনুমতিপত্র বাধ্যতামূলক করা হবে না। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রনিক বিল অব লেডিংয়ের বৈধতা অস্বীকার করবে না এবং দেশটি থেকে আসা স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য দ্রুত ছাড় করবে।