ইআরডি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাড়ছে দেশি-বিদেশি ঋণের ঝুঁকিজুন নাগাদ আয়কর রিটার্ন ৪৫ লাখে উন্নীত হবেউল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেই
No icon

নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি স্থিতিশীলতা রাখা: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় চলতি বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের নিচে নামতে দেওয়া হবে না। এটি সম্ভব। এছাড়া রাজস্ব বাড়াতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির প্রাণ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সেদিক থেকে বাংলাদেশ অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। নিট বা গ্রস উভয় হিসাবেই বাংলাদেশ ভালো অবস্থায় আছে। 

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, রিজার্ভ ভালো আছে দাবি করছেন আপনি। কিন্তু রিজার্ভে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওদের লক্ষ্যমাত্রা কখনো পূরণ করা যাবে না। তাছাড়া আইএমএফ থেকে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশের ১২ দিনের বিদেশি আয়ের সমান। দেশে যত প্রবাসী আয় আসে, তা দ্বিগুণ করা সম্ভব।

নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ কি প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও গতিশীল রাখতে হবে। এজন্য সরকারকে অর্থনীতির সম্ভাবনাময় খাতগুলো উন্মোচন করতে হবে। রাজস্ব সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।

অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে যেসব ক্ষেত্র আছে সেগুলো পুরোপুরি ভাবে এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির মূল হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থান ভালো। এটি নিট বা গ্রস যে হিসাবেই বলেন, এখনো ভালো অবস্থায় আছে রিজার্ভ। 

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে থাকবে অর্থনীতি। আপনি বা অন্য যে কেউ অর্থমন্ত্রী হলে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে কি দেখবেন। উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন ঠিকই বলেছেন। আমাদের সবার একই চিন্তা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলোচনা হয়। ফলে প্রধানমন্ত্রী যে চিন্তা করেন, আমাদের একই চিন্তা। কারণ অর্থনীতি দুর্বল হলে আবার অর্থমন্ত্রী হলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় প্রথমেই কি উদ্যোগ নেবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কে অর্থমন্ত্রী হবেন, তা প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন। শপথ হলেই তা জানা যাবে। তবে সামগ্রিকভাবে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এখনো অনেক অনাবিষ্কৃত খাত আছে, এগিয়ে যেতে হলে আমাদের সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশকে আরও অনেক দূর যেতে হবে, সেটা সম্ভব। সঠিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমেই সরকার এগিয়ে যেতে চায়।

ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, সুদহার আগের পর্যায়ে রেখে দিলে এখন তা ২২ থেকে ২৪ শতাংশে উঠে যেত। তাতে অর্থনীতি ও দেশের মানুষ হারিয়ে যেত। ব্যাংক খাতে অনেক সংস্কার হয়েছে। ব্যাংক খাত অনেক ভালো আছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো আগামীতে দেখা হবে।

কিন্তু সুদহার আবার বাড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সুদহার বাড়ছে, তা ঠিক। বাজার যদি তা নিতে পারে, তাহলে কেন বাড়বে না? কিন্তু সুদহার যখন বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, সে সময় ছোট, মাঝারি, এমনকি বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে বেশি সুদ দেওয়া সম্ভব ছিল না। এরপর খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে আমরা তা বাড়তে দেইনি। 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ এ ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ছোট-বড় ২৪টি অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। প্রকৃত অর্থের সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের লুটপাট আরও বেশি। এ বিষয়ে নতুন সরকারের কোনো পরিকল্পনা থাকবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন সরকার এখনো গঠিত হয়নি। ফলে এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা সমীচীন হবে না। সিপিডি এর আগেও টাকার অবমূল্যায়নের কথা বলেছে; তা না হলে আমরা নাকি টিকতে পারব না। প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন কি দেশের মানুষ না খেয়ে আছে? বাজার থেকে কোনো জিনিস অবিক্রীত ফেরত আসে?

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি বিষয়ে এক প্রশ্নে মুস্তফা কামাল বলেন, মূল্যস্ফীতি ছাড়া অর্থনীতি চলতে পারে না। যারা অর্থনীতি নিয়ে সেভাবে চিন্তা করেন না, তারা চাইতেই পারে মূল্যস্ফীতি না হোক। কিন্তু বর্তমানে মূল্যস্ফীতিতো অসহনীয় পর্যায়ে প্রায় ১০ শতাংশে চলে গেছে, এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরের মধ্যে ৮ থেকে ১০ বছর ৬ শতাংশের নিচে ছিল। এর থেকে ভালো অবস্থা হতে পারে না।

সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পশ্চিমা দেশ যদি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয় তাহলে পোশাক রপ্তানি এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? এ নিয়ে সরকারের কোনো প্রস্তুতি রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি জোর করে কিছু করতে চায়, করতেই পারে। বাংলাদেশেও সেটা করতে পারে। কিন্তু এটা কি হয় নাকি? কেউ যদি অপরাধ করে তার শাস্তি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তো কোনো অপরাধ করেনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতিসহ সব দিক থেকেই ভালো করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও তা স্বীকার করছে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ২০টি উন্নত দেশের একটি হবে। এ লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে।