বাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডি
No icon

দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধস

আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন ও শ্লথগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নগামী এবং রপ্তানি আয়ে নিম্নগতির প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আয়েও। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) শুল্ক আহরণে ঘাটতি হয়েছে ৭ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে দশটি পণ্যে উল্লেখযোগ্য হারে শুল্ক আহরণ কমেছে।পণ্য দশটি হলো- চাল, পেট্রোলিয়াম অয়েল, স্টিল পাইপ, স্টিল শিট, রেলওয়ে কোচ, স্টিল স্ট্রাকচার, আয়রন স্টিল, স্টিল ব্রিজ সেকশন, ন্যাপথা ও অ্যালুমিনিয়াম ক্যাবল। এনবিআরের সূত্রমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসের তুলনায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এ দশ পণ্যে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকার রাজস্ব আয় কমেছে। একই সময় এসব পণ্যের আমদানিও কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আট মাসে দশটি পণ্যে মোট আমদানি হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯২ টন। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দশ পণ্য আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৫৮৩ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দশ পণ্যে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। সেটি চলতি অর্থবছরে কমে আয় হয়েছে ১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। ফলে দশ পণ্য আমদানিতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে শুল্ক আয় কমেছে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও এলসি জটিলতায় কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ে বড় প্রভাব পড়েছে। ফলে পণ্যের আমদানিতে বড় ভাটা পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আহরণে। দশ পণ্যের মধ্যে চাল আমদানি আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) কমেছে ১১ লাখ ৭১ হাজার ৮১৬ মেট্রিক টন। আর রাজস্ব আহরণ কমেছে ৩৪৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের আট মাসে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৭২ হাজার ৪২১ টন। আর রাজস্ব আয় হয়েছিল ৩৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের একই সময় চাল আমদানি হয়েছে মাত্র ৬০৫ টন। আর রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ২ কোটি টাকা।আগের অর্থবছরের ৮ মাসে স্টিল পাইপ আমদানি হয়েছিল ৩২ হাজার ৯০৯ টন। আর রাজস্ব আয় হয়েছিল ২৫৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে স্টিল পাইপ আমদানি হয়েছে ৭৬৫ টন। আর রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ৮ কোটি টাকা। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর রাজস্ব কমেছে ২৪৭ কোটি টাকা।পেট্রোলিয়াম অয়েল আগের বছরের ৮ মাসে আমদানি হয়েছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৪৭ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৫০৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। আর রাজস্ব আয় হয়েছে ২৮৪ কোটি টাকা। আগের বছরে তুলনায় চলতি বছরে এ খাতে রাজস্ব আয় কমেছে ২২২ কোটি টাকা।

এ ছাড়া স্টিল শিট আমদানিতে আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরে রাজস্ব আহরণ কমেছে ২১৩ কোটি টাকা। রেলওয়ে কোচ আমদানিতে আগের বছরের তুলনায় এ বছর রাজস্ব আহরণ কমেছে ১৭২ কোটি টাকা। স্টিল স্ট্রাকচার খাতে রাজস্ব আহরণ কমেছে ১৩৭ কোটি টাকা, আয়রন স্টিল খাতে এ বছর রাজস্ব আয় কমেছে ৯৫ কোটি টাকা। স্ট্রিল ব্রিজ সেকশনে আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরের আট মাসে রাজস্ব আহরণ কমেছে ৯২ কোটি টাকা। ন্যাপথা খাতে রাজস্ব আয় কমেছে ৭৬ কোটি টাকা। একই সময়ে অ্যালুমিনিয়াম ক্যাবলে রাজস্ব আহরণ কমেছে ৭৫ কোটি টাকা।চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আহরিত হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা।