বাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডি
No icon

এনবিআরের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তে বিদেশী বিনিয়োগ কমছে

এনবিআরের অনিশ্চিত ও অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ কমছে। বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস সেলফোন অপারেটররা। কিন্তু তাদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে প্রণোদনা দিয়ে মোবাইল অপারেটরদের বিনিয়োগ নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই তাদের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এমন অনিশ্চিত এবং অপরিকল্পিত পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘টেলিকম ট্যাক্সেশন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) এ বৈঠকের আয়োজন করে। 

অনুষ্ঠানে অ্যামটব মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, ‘বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কর দিতে হয় বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরদের। বিভিন্ন কর বাবদ গ্রাহক থেকে পাওয়া ৯৮ শতাংশ অর্থই খরচ করতে হয়। কিন্তু প্রত্যক্ষ এ কর বাদ দিয়ে যদি সিম ও করপোরেট কর প্রত্যাহার এবং স্মার্টফোন ও ডাটা সহজলভ্য করা হয়, তবে জিডিপিতে অবদান রাখা সম্ভব হবে।’

সাবেক মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন বিদেশী বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে এনবিআরের অনিশ্চিত এবং অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের কারণে। দেশের হ্যান্ডসেট কোম্পানিগুলোকে এখানে বিনিয়োগ করার জন্য প্রণোদনা দিলেন, তারা সবাই বিনিয়োগ করল। কিন্তু দুই বছর পর তাদের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক চাপিয়ে দেয়া হলো। এতে তাদের উৎপাদন কমে গেল, কস্ট অব বিজনেস বেড়ে গেল।’ 

গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, ‘গ্রামীণফোনের লভ্যাংশের ৭৭ শতাংশ সরকারি কোষাগারে দিয়ে দিতে হয়। আমরা সব সময় কোম্পানির লভ্যাংশ দেখি, লভ্যাংশের আগে ১০ গুণ বেশি দিয়ে আসতে হয়, তা দেখি না। দেশে ইন্টারনেট প্যানিট্রেশন বাড়ানোর জন্য আমাদের কর ছাড় দিতে হবে, একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত স্মার্টফোনের উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায়, তাও দেখতে হবে।’

বাংলালিংকের ভারপ্রাপ্ত সিইও তৈমুর রহমান বলেন, ‘আমরা কর ব্যবস্থা নিয়ে স্বল্প সময়ের পরিকল্পনা করছি। দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিকল্পনা করছি না। আমাদের ২০ কোটি সিম ব্যবহারকারী রয়েছে, শতভাগ মানুষ আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তাদের যদি ট্যাক্স ব্র্যাকেটে আনতে পারতাম, তাহলে কর খাতে অনেক নতুন সুযোগ উন্মোচন হতো। কর ব্যবস্থা যদি স্মার্ট করা যায়, তাহলে সরকারের রাজস্বে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব আসবে।’ 

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের চেহারা পাল্টে যাবে। আমরা একই তালে, একই গতিতে এগিয়ে যেতে চাই। এ ট্যাক্সেশন সিস্টেমের যদি কোনো রিভিউ করতে হয়, তাহলে টেলিকম ইকোসিস্টেমের সঙ্গে টপ টু বটম যতগুলো খাত জড়িত আছে, সবাইকে নিয়ে বসে সরকার নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে পারে।’ 

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘স্মার্ট কর নীতিমালা ছাড়া টেলিকম খাতের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। টেলিকম খাতকে ঢেলে সাজিয়ে স্মার্ট টেলিকম খাত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য ঈদের পর এনবিআর চেয়ারম্যান, বিটিআরসি চেয়ারম্যান এবং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিকম খাতে পিএসআরসহ দীর্ঘমেয়াদি যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করব। ঈদের পরের সপ্তাহেই আইসিটি ও টেলিকম খাতের যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করব।

টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদির সঞ্চালনায় এ সময় আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, গ্রামীণফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর হোসেন সাদাত, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির প্রমুখ।