উল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবে
No icon

রাজস্ব আহরণে এনবিআরকে সহায়তা করবে দুদক

রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সম্প্রতি এমন আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। গতকাল ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিয়েট অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা জানান তিনি। অর্থ বিল-২০১৯, জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০ এবং নতুন ভ্যাট আইন ও এর বাস্তবায়ন শীর্ষক সেমিনারটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনবিআরের সদস্য কানন কুমার রায় (কর নীতি) ও ড. আবদুল মান্নান শিকদার (ভ্যাট নীতি)। সেমিনারে অর্থ বিল ও ভ্যাট আইন নিয়ে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেছেন আইসিএসবির কাউন্সিল সদস্য মো. আজিজুর রহমান। আর সেশন চেয়ারম্যান হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আসাদ উল্লাহ।

দুদকের সহায়তার আশ্বাস নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত্কালে রাজস্ব আদায়ে সংস্থাটির সহায়তা চাওয়া হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে দুদক সর্বাত্মক সহায়তা করবে বলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছেন। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সব সংস্থাকে নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তিনি বলেন, বাজেটে এনবিআরকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের প্রকৃত আদায়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। মূলত কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে এনবিআরকে বড় লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। বর্তমানে আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম। তাই কর কেন আসে না তা আমাদের বিবেচনা করা উচিত।

কর প্রদান নিয়ে ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কর কম দেয়া বা না দেয়ার একটা প্রবণতা আছে। ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য থাকে বেশি লাভ করা এবং রাতারাতি বড়লোক হওয়া। আমি খেয়াল করে দেখেছি, বেশকিছু ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা ১৪ থেকে ১৫ কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা বিশ্বের অন্য দেশে দেখা যায় না। ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য থাকে কত দ্রুত এত কোম্পানির মালিক হওয়া যায়। এজন্য তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতনও দেন না। আর বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে দুই মাসের বেতন হাতে রেখে দেন। অর্থাৎ কোনো কোম্পানির কর্মকর্তা চাকরি ছাড়তে চাইলে তাকে দুই মাসের বেতন বকেয়া রেখে যেতে হচ্ছে। এমনটা হওয়া উচিত না। অনেকে বলছেন চট্টগ্রামে কনটেইনার জট লেগেছে। এ জট শুল্ক বিভাগের জন্য লাগে না। এখানে পণ্য ছাড়াতে কড়াকড়ি আরোপ করায় ব্যবসায়ীরা পণ্য নিতে আসছেন না। তারা অপেক্ষা করছেন, জট লাগলে এনবিআর কড়াকড়ি তুলে দেবে। অথচ তারা পোর্টে কনটেইনার রাখার ভাড়া ঠিকই গুনছেন। আমরা আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে শুল্কে অনেক ছাড় দিয়েছি। এমন ছাড় বিশ্বে আর কোথাও নেই। তার পরও ব্যবসায়ীরা আরো ছাড় চান।

টার্নওভার কর বিষয়ে তিনি বলেন, বছরে ৫০ লাখ টাকা টার্নওভার হয় না পান দোকানদার ছাড়া এমন ব্যবসায়ী খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই কর কর্মকর্তাদের সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। তারা যদি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিশে দুর্নীতি করেন, তবে আমাদের রাজস্ব আদায়ে সমস্যা হবে।

করদাতা ব্যক্তির আয়সীমা নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ কর দেয়। আমাদের লক্ষ্য করদাতা বাড়ানো। বর্তমানে যে আয়সীমা দেয়া আছে, সেটা ঠিকই আছে। এর থেকে বাড়ালে আমাদের যে ২০ লাখ কর নিবন্ধন রয়েছে, তা থেকে আরো কমে যাবে। তবে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে আমরা কর জরিপ শুরু করেছি।

ভ্যাট আইন নিয়ে এনবিআর সদস্য ড. আবদুল মান্নান শিকদার বলেন, নতুন আইন সহজ করা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও সরকারের উপকার হবে। কারণ আইনটি সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। এতে অনলাইনে সবকিছু করা যাবে। করদাতাকে রাজস্ব অফিসে আসতে হবে না। এতে ব্যবসা সহজ হবে এবং ইজ অব ডুয়িং সূচকের মান উন্নয়ন হবে।

নতুন আইনে পণ্যের মূল্য ঘোষণা থাকবে না ঠিকই, কিন্তু ব্যবসায়ীদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হবে। আর এ ন্যায্যমূল্য বাজারভিত্তিক হবে, যার তথ্য সরকারের কাছে থাকবে।

এনবিআর সদস্য (কর নীতি) কানন কুমার রায় বলেন, আয়কর নিয়ে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় আপত্তি ছিল শেয়ার মার্কেটের প্রণোদনা নিয়ে। যখন রিটেইনড আর্নিংস ও ডিভিডেন্ডে কর আরোপের প্রস্তাব দেয়া হয়, তখন অনেকেই প্রশংসা করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা যায় ব্যবসায়ীরা এটিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছেন। বিশেষ করে টকশোগুলোয় বিষয়টি নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্তটা সংশোধন করেছি। কিন্তু সংশোধনী পাস হওয়ার পরও শেয়ারবাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। বাজারসংশ্লিষ্টরা আমাকে জানান, শেয়ারবাজারে এর ভালো প্রভাব আসবে। তবে একটু সময় লাগবে।