উল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবে
No icon

অডি গাড়ি ব্যবহারকারীরা এনবিআরের নজরদারিতে

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর পরিপ্রেক্ষিতে অডি গাড়ি ব্যবহারকারী ৬৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা সরবরাহ করেছে বিআরটিএ। এসব গাড়িতে কর ফাঁকি হতে পারে বলে ধারণা করছে এনবিআর। তাই এসব গাড়ি ক্রয়ে বিনিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট করবর্ষে করদাতার আয়কর নথিতে প্রদর্শিত হয়েছে কিনা, তা যাচাইয়ে ঢাকার কর অঞ্চলগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি। এনবিআর সূত্রমতে, বিআরটিএর সরবরাহ করা তালিকায় অডি গাড়ি ব্যবহারকারী ব্যক্তি ২৭ জন। এর বাইরে ৪২টি কোম্পানিও অডি গাড়ি ব্যবহার করছে। এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বিত্তবানরাই বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের সামর্থ্য রাখেন। তাদের আয়কর নথি পর্যালোচনা করা হবে। তারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন কিনা, আয়কর নথি যাচাই করে তা উদ্ঘাটন করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কর ফাঁকির মামলা আছে, সেগুলোও পুনরায় উন্মোচন করা হবে।

দেশে অডি গাড়ির একমাত্র আমদানিকারক প্রোগ্রেস মোটরস ইম্পোর্টস লিমিটেড। ২০১৭ সাল থেকে অডি গাড়ি আমদানি করছে তারা। তার আগে বিভিন্ন উপায়ে আমদানি হতো। প্রতিষ্ঠানটির সূত্রমতে, অডি এথ্রি মডেলের গাড়ির দাম নিবন্ধনসহ ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর বাইরে এ ব্র্যান্ডের অন্যান্য মডেলের গাড়িও আছে। গাড়িগুলোর সর্বোচ্চ মূল্য ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

সব আইন-কানুন মেনেই বাংলাদেশে তারা অডি গাড়ি বিক্রি করছে বলে জানান প্রোগ্রেস মোটরস ইম্পোর্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদ নুসরাত খান। তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকেই এনবিআর বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের কর ঠিকমতো পরিশোধ হচ্ছে কিনা, তা জানতে তথ্য নিয়ে থাকে। শুধু অডি নয়, অন্য ব্র্যান্ডের গাড়ির তথ্যও সংগ্রহ করে সংস্থাটি।

এনবিআরে পাঠানো বিআরটিএর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৮ মডেলের অডি গাড়ি ব্যবহার করছেন দুই ব্যক্তি মাহফুজুল বাসিত পরাগ ও রেজিনা আলম। একই মডেলের অডি গাড়ি ব্যবহার করছে রহিম এনার্জি লিমিটেডও।

২০১৭ মডেলের ১৯৮৪ সিসির অডি গাড়ি ব্যবহার করছেন আশমিতা ইরাদ আলী, মোহাম্মদ আবু শাহরিয়ার, আবদুর রউফ খান, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন মোজাম্মেল, মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ শরফুদ্দিন আলী ও মুনা নাবিলা রানা। কোম্পানি পর্যায়ে একই মডেলের ও সিসির অডি গাড়ি ব্যবহার করছে অ্যারিস্টোফার্মা লিমিটেড, রানার মোটরস লিমিটেড, আরএ স্পিনিং মিলস লিমিটেড, আমরা রিসোর্সেস লিমিটেড, আরএকে পেইন্টস লিমিটেড, প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জি লিমিটেড, পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি লিমিটেড, এজি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আমান স্পিনিং মিলস লিমিটেড, মন্ডল ফ্যাব্রিকস লিমিটেড, এসএফ ফ্যাশনওয়্যারস লিমিটেড, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সায়হাম মাল্টিফাইবার টেক্সটাইলস লিমিটেড ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড।

একই মডেলের সবচেয়ে দামি দুই হাজার সিসির অডি গাড়ি ব্যবহার করছেন সাদিয়া মনজুর। এছাড়া ১৭৯৮ সিসির অডি গাড়ি ব্যবহার করেন নুরুল ইসলাম খান, ইকবাল কলিম এবং প্রোগ্রেস মোটরস ইম্পোর্টস লিমিটেড।

এনবিআরের পাঠানো বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৭ মডেলের ২০০০ সিসির অডি গাড়ি ব্যবহার করছে গার্মেন্টস কোম্পানি তুসুকা, প্রিমরডিয়াল লিমিটেড, ইনোভেটিভ মোটরস ও এসএএম গ্রুপ। ১৪০০ সিসির গাড়ি ব্যবহার করছে সামাহ রেজর ব্লেডস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ১৩৩৫ সিসির অ্যালায়েন্স রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।

২০১৬ মডেলের ২০০০ সিসির অডি ব্যবহার করছে বেক্সিমকো হোল্ডিংস লিমিটেড, ফকির নিটওয়্যারস লিমিটেড ও এসবি টেল এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড। এ মডেলের ১৪০০ সিসির অডি গাড়ি ব্যবহারকারী মজুমদার গার্মেন্টস লিমিটেড ও শাফকাত রহমান।

২০১৪ মডেলের দুই হাজার সিসির অডি ব্যবহার করছে আজাদ রিফাত ফাইবার্স (প্রা.) লিমিটেড। ১৯৮৪ সিসি ব্যবহার করছেন আসিফ মোহাম্মদ ও লুতফা বেগম। ১৪০০ সিসির অডি ব্যবহার করছেন নাবিল সুলতান, তানভির আজিজ খান ও সেলিম চৌধুরী।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ মডেলের ২০০০ সিসির অডি ব্যবহারকারী ব্যক্তি ও কোম্পানি হলো ওমর মোহাম্মদ ভাই, বেলকুচি স্পিনিং মিলস লিমিটেড, প্রাইড লিমিটেড, ইউনিক ইনফোওয়ে লিমিটেড, এমপোরি হোল্ডিংস লিমিটেড এবং সিরাজ এএনও ইস্পাত লিমিটেড।

একই মডেলের ১৯৮৪ সিসির অডি গাড়ি ব্যবহার করছেন শাকিল রহমান, মো. এনএম খান মুরাদ, র্যানকন ইম্পোর্টস লিমিটেড, এ ডব্লিউ আর রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, প্রাইম গার্মেন্টস লিমিটেড, মো. রফিকুল ইসলাম, জাফর উম্মিদ খান, মো. আদনান ইমরান, ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড, আবুল খায়ের স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, পারটেক্স পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস লিমিটেড, মো. ফরিদ খান, সানম্যান বারডেম ফার্মা লিমিটেড ও শাশা ডেনিমস লিমিটেড।

২০১২ মডেলের ২০০০ সিসির বিলাসবহুল অডি গাড়ি ব্যবহার করছেন সৈয়দা তাহমিনা পারভিন। ১৯৮৪ সিসির ব্যবহার করছেন শায়মা রাশেদুর রহমান ও হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এবং ১৯৬৮ সিসির অডি ব্যবহার করছে রাকিফ অ্যাপারেলস ওয়াশিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড।

এনবিআর সদস্য মেফথা উদ্দীন খান (কর জরিপ ও পরিদর্শন বলেন, ব্যক্তিপর্যায়ে যারা দামি ও একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন, তারা কর রিটার্নে কী ধরনের তথ্য দিচ্ছেন তা যাচাই করতে চাই আমরা। আইন অনুযায়ী তাদের সম্পদ ও আয়ের হিসাব ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তদন্ত করে দেখা হবে। কোম্পানি পর্যায়ে যারা দামি গাড়ি ব্যবহার করছেন তারা অবচয় হিসাব করছেন কিনা, তা যাচাই করা হবে। তাছাড়া আমাদের আইন অনুযায়ী কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ও সম্পদের হারের ওপর কত দামের গাড়ি কিনতে পারবেন, তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। যারা নির্ধারিত সীমার বেশি দামে গাড়ি কেনেন তাদের অবচয় সুবিধা দেয়া হয় না। তাই যেসব কোম্পানি দামি গাড়ি ব্যবহার করছে, তাদের কর তথ্য যাচাই ও তদন্ত করা হবে।