ইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসের
No icon

নতুন ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা : বাংলাদেশ ব্যাংক

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে মূল লক্ষ্যে রেখে আজ বুধবার নতুন ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে স্বভাবতই সুদহার আরও বাড়ানোর ঘোষণা থাকছে। পাশাপাশি ডলারের দাম নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর ঘোষণাও থাকতে পারে। আজ বেলা ৩টায় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ২০২৪ সালের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংক খাতে সুশাসন রক্ষার পাশাপাশি মার্কিন ডলার তথা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ও বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে দেশ মারাত্মক সমস্যায় ভুগছে। ডলারের সংকটের মধ্যে বাজার অস্থির রয়েছে, এর সঙ্গে চলছে স্থানীয় মুদ্রার সংকট। এমন পরিস্থিতিতে নতুন সরকারের প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষিত হতে যাচ্ছে আজ।  ডলার-সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিলেও এখনও সফল হতে পারেনি। কিছু দিন পরপর ডলারের হার বেঁধে দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ছিল। কিন্তু তাতে করেও গত বছরজুড়েই ডলার বাজারের অস্থিরতা ঠেকানো যায়নি। গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ২৭ শতাংশ কমেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। এই অবমূল্যায়নের সুযোগ নিয়ে বিশেষ গোষ্ঠী ও কিছু এক্সচেঞ্জ হাউস কম দামের কেনা ডলার মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে। আবার প্রবাসীদের একটা অংশও বিলম্বে দেশে ডলার পাঠিয়েছেন।  

গত দেড় বছর ধরে দেশে ডলার-সংকট চলছে। এই সময়ে ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে। তবে খোলাবাজারে তা লেনদেন হচ্ছে ১২০ টাকার বেশি দামে। এটি সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা পর্যন্তও উঠেছিল। গত বছর ২২ নভেম্বর থেকে তিন দফায় ডলারের দাম এক টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের দরে লাগাম টানতে সর্বশেষ গত বুধবার ২৫ পয়সা এবং ২৯ নভেম্বর ডলারের দর ২৫ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। 

ডলারের দাম লাগামহীনতার প্রভাবে চলতি হিসাবের পাশাপাশি আর্থিক হিসাবে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৪৮ বিলিয়ন)। ডলার-সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ধেকের বেশি কমেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী, এখন রিজার্ভ ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম।

তবে এভাবে সব সময় ডলারের দর কমানো সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে গত মাসের মাঝামাঝি ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মডেল বাস্তবায়নে ও কারিগরি সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

ক্রলিং পেগ যেভাবে কাজ করে
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান তখন বলেছিলেন, দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে ডলারের রেট নির্ধারণে বিশেষ দল কাজ করছে। মূলত ক্রলিং পেগ পদ্ধতির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে ডলারের বাজারে স্বস্তি ফিরতে পারে।

অর্থনীতির ভাষায় ক্রলিং পেগ হলো নিজের দেশের মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি; যেখানে একটি নির্দিষ্ট বিনিময় হারসহ একটি মুদ্রাকে একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। অস্থিরতার সময় দেশীয় মুদ্রার মূল্য এবং হারের সীমাও ঘন ঘন সমন্বয় করা হয়। এখানে মুদ্রার হারের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে। ফলে একবারেই খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। জানা গেছে, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, কোস্টারিকাসহ কিছু দেশ এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রধান লক্ষ্য
গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে ও আগামী জুনের মধ্যে তা ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তবে গত ডিসেম্বর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ ও সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল। মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদহার কিছুটা বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি নীতি সুদের হারও বাড়িয়েছে। এতে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

তবে একই সঙ্গে তারল্যসংকট ও উচ্চ সুদহারের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। গত নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নীতি সুদহার আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।