
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভাগ করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে চায় সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে তাঁর নিজ দপ্তরে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য রুলস অব বিজনেস পরিবর্তনের পাশাপাশি কয়েকটি আইন সংশোধনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।গত ১ সেপ্টেম্বর রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে সরকার। এর আগে ২১ আগস্ট সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন হয়। সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা প্রাধান্য পাবেন। দুই বিভাগেই রাজস্ব আদায় কাজে অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এনবিআর ভাগ করে রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে চান। এ জন্য রুলস অব বিজনেস পরিবর্তনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এতদিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অভ্যন্তরীণ সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ নামে চারটি বিভাগ ছিল। আগামীতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে নতুন রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হবে। একই সঙ্গে এনবিআরও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, নতুন দুই বিভাগের অর্গানোগ্রামও ঠিক করা হচ্ছে। এতদিন এনবিআরে চেয়ারম্যানের পরে সদস্যসহ অন্যান্য পদ ছিল। বিভাগের ক্ষেত্রে সচিবের পরের পদগুলো কীভাবে বিন্যস্ত করা যায়, তা নিয়েও কাজ চলছে। সার্বিকভাবে এনবিআরকে দুই ভাগ করতে দু-তিনটি আইন সংশোধন করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করবে একটি বিভাগ এবং আদায় করবে আরেক বিভাগ। জারি করা অধ্যাদেশ এনবিআর কর্মীদের আন্দোলনের মুখে স্থগিত করে সরকার। আন্দোলনকারীদের মূল দাবি ছিল, পদায়নের ক্ষেত্রে রাজস্ব কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে অধ্যাদেশ সংশোধনে পাঁচ সদস্যদের কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১১টি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন-বিয়োজন করে সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
মূল অধ্যাদেশে বলা হয়েছিল, রাজস্ব নীতি বিভাগে সচিব পদে সরকার উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে পারবে। সংশোধিত অধ্যাদেশের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, রাজস্ব নীতি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বা আদায় বিভাগের সচিব পদে রাজস্ব আহরণ কাজে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সংশোধিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, শুধু রাজস্ব সংগ্রহে অভিজ্ঞতা থাকা ব্যক্তি এ পদে নিয়োগ পাবেন। সচিব পদ বাদে দুই বিভাগের অন্যান্য পদে রাজস্ব আহরণের অভিজ্ঞদের নিয়োগের পরিধি মূল অধ্যাদেশের তুলনায় বেড়েছে।