ইআরডি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাড়ছে দেশি-বিদেশি ঋণের ঝুঁকিজুন নাগাদ আয়কর রিটার্ন ৪৫ লাখে উন্নীত হবেউল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেই
No icon

কর অব্যাহতি তুলে দেবে এনবিআর

অর্থনীতির আকারের বিবেচনায় বাংলাদেশে কর আদায়ের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। এর কারণ শুধু করের আওতা কম কিংবা কর ফাঁকি নয়, বিপুল অঙ্কের কর অব্যাহতি বা ছাড়ও। কর অব্যাহতির এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার শর্তের মধ্যেও কর ছাড় পরিহারের বিষয়টি রয়েছে।জানা গেছে, ব্যতিক্রমধর্মী জনস্বার্থমূলক কার্যক্রম ছাড়া শুল্ক্ক-কর অব্যাহতি তুলে দিতে চায় এনবিআর। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। ওই সভায় এনবিআরের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।সভায় এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে যাবে। এ ছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ-উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। লক্ষ্য অর্জনে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের এই অনুপাত ১০ শতাংশেরও কম। কর আদায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অব্যাহতির সংস্কৃতি অন্যতম বড় বাধা।বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সরকারের কার্যক্রম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কিংবা মেরামতে পণ্য আমদানি বা কেনাকাটা করলে শুল্ক্ক-কর অব্যাহতির আবেদনের পরিবর্তে কোন খাতে কত কর দিতে হবে, তার হিসাব করে প্রয়োজনীয় অর্থ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেই বরাদ্দ থেকেই শুল্ক্ক-কর পরিশোধ করতে হবে। মূল্য সংযোজন কর, আমদানি শুল্ক্ক, সম্পূরক শুল্ক্ক বা আয়কর সব ক্ষেত্রেই এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। ব্যতিক্রমী জনস্বার্থমূলক কারণ ছাড়া এসআরও জারি করে বিশেষ শুল্ক ছাড় সুবিধা পরিহার করা হবে।

বৈঠকে আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন এবং আইসিডিডিআর,বির শুল্ক্ক-কর অব্যাহতি নিয়ে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, আগের বছরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ শুল্ক্ক-কর অব্যাহতি সুবিধা ভোগ করেছে, এর সঙ্গে সমন্বয় করে আগামীতে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শুল্ক্ক-করে বাজেট রাখতে হবে। এনবিআরের এ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে খসড়া আকারে জানানো হয়েছে। শিগগির এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অব্যাহতির পরিবর্তে প্রযোজ্য শুল্ক্ক-কর আদায় করে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর নির্দেশ দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে এনবিআর। তবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না। কিন্তু আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার পাওয়ার শর্ত হিসেবে এখন এ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান রয়েছে সরকারের। এনবিআরও এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে তৎপরতা বাড়িয়েছে।

রাজস্ব খাতে সংস্কার নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে গত নভেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে চিঠি দেয় আইএমএফ। এতে বলা হয়, দু পক্ষের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ কাজ করতে চায়। এ খাতের সংস্কারে আইএমএফ এনবিআরকে লিখিত সুপারিশ পাঠাবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এনবিআর কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোরও পরামর্শ দেওয়া হয় চিঠিতে। আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় কর আহরণ কম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আয়কর, মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট ও আমদানি শুল্কে ব্যাপক ছাড় দেওয়া।২০২০ সালে এনবিআরের তৈরি করা এক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ওই বছর কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, পণ্য আমদানির বিপরীতে ৪৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বন্ড সুবিধার আওতায় শুল্ক্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো। এ ছাড়া আয়কর ও ভ্যাট খাতে আরও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো ছাড় দেওয়া হয়েছে।