ইআরডি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাড়ছে দেশি-বিদেশি ঋণের ঝুঁকিজুন নাগাদ আয়কর রিটার্ন ৪৫ লাখে উন্নীত হবেউল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেই
No icon

আয়কর রিটার্ন জমার মৌসুম অক্টোবর-নভেম্বর

অক্টোবর মাস চলছে, আসছে নভেম্বর মাস আয়কর রিটার্ন জমার যত হিসাবনিকাশ। জুলাই মাস থেকে রিটার্ন দেওয়া গেলেও মূলত অক্টোবর-নভেম্বর মাসেই সবাই রিটার্ন দেওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে এই সময়টা রিটার্ন জমার মৌসুম বলা যায়। আনুষঙ্গিক কাগজপত্র সংগ্রহ, আইনজীবীর অফিসে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায় এই মাসেই। রিটার্ন ফরম পূরণ করার সময় এবার লক্ষ রাখতে হবে, কোন কোন পরিবর্তন হলো। পরিবর্তনগুলো মনে রেখেই সব হিসাব-নিকাশ হবে।

বর্তমানে ৭৯ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তার মধ্যে গত বছর ২৫ লাখের মতো রিটার্ন জমা দিয়েছেন। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক। রিটার্ন জমা না দিলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাসহ বিলম্ব মাশুল এবং নির্ধারিত আয়ের বিপরীতের সুদ আরোপ করার বিধান আছে। গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সোয়া তিন লাখ করদাতা রিটার্ন দিয়েছেন বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
এবার সবাইকে রিটার্ন জমায় বেশি উদ্যোগী হতে হবে। কারণ, রিটার্ন জমা না দিলে ৩৮ ধরনের সেবা মিলবে না। ওই সেবাগুলো নিতে রিটার্ন জমার রসিদ দেখাতে হবে। রসিদ না দেখে সেবা দিলে যেসব প্রতিষ্ঠান এই সেবা দেবে, তাদের ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। যেমন ২০ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ পাওয়া, ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার, অনলাইনে বেচাকেনার ব্যবসা, রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরগাড়ি দেওয়া ইত্যাদি। এমনকি সন্তানকে ইংরেজি সংস্করণে (ইংলিশ ভার্সন) পড়াশোনা করালেও রিটার্ন জমা দিতে হবে। তাই ভবিষ্যতে এসব সেবা পেতে এবার রিটার্ন দিতেই হবে। এ ছাড়া গাড়ির মালিক, অভিজাত ক্লাবের সদস্য, কোম্পানি পরিচালক, বণিক সংগঠনের সদস্য, পৌর থেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত প্রার্থী হলেও রিটার্ন দিতে হবে।

এবার রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই আছে। ন্যূনতম করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। এর বেশি করযোগ্য আয় থাকলে অবশ্যই কর দিতে হবে। এ ছাড়া সর্বনিম্ন কর এলাকা ভেদে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা।

অবশ্য বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত নেওয়ার হিসাব পরিবর্তন করা হয়েছে। সাধারণ করদাতাদের কর রেয়াত পাওয়ার সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। বার্ষিক আয়ের ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবেন। আর ধনী-গরিব সবাই ১৫ শতাংশ কর রেয়াত পাবেন। রিটার্ন তৈরির সময় বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারবেন
দুইভাবে রিটার্ন দেওয়া যাবে। আপনি চাইলে কর কার্যালয়ে গিয়ে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। আবার অনলাইনেও রিটার্ন দেওয়া যাবে। অফলাইন বা কর কার্যালয়ে রিটার্ন দিতে হলে আপনাকে রিটার্নের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও পেঅর্ডার বা চালান কপিসহ নির্দিষ্ট কর অঞ্চলে গিয়ে রিটার্ন জমা দিতে হবে। এবার কর মেলা হলে আপনি সেখানে গিয়েও রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।

অনেকেই এসব ঝক্বিঝামেলা এড়াতে অনলাইন রিটার্ন দিতে চান। গতবারের মতো এবার সেই ব্যবস্থাও আছে। এ জন্য করদাতাকে এনবিআরের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের টিআইএনের অনুকূলে নিবন্ধন নিতে হবে। তারপর অনলাইনে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে রিটার্ন দেওয়া যাবে। গতবার থেকে শুরু হওয়া অনলাইন ব্যবস্থায় ৬৬ হাজার করদাতা রিটার্ন দিয়েছিলেন। এবার তিন লাখ করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দেবেন বলে আশা করছে এনবিআরের কর বিভাগ।
রিটার্ন জমার সময় বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌরকরের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।

কর রেয়াত নিতে চাইলে জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, স্টক বা শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলে চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে চাঁদার সনদ এসব দেখাতে হবে।