
দ্বিতীয় দফায় আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ দফায় আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে করদাতাদের সুবিধার্থে রিটার্ন দাখিলের সময় ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, প্রায় প্রতি বছর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানো হয়। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় সময় বাড়ছে। তবে এবার অনলাইনে রিটার্ন বা ই-রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করায় করদাতাদের প্রস্তুতির বিষয়ও বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়াতে এই সময় বাড়ানো হতে পারে। তবে এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নেওয়া হয়নি। চূড়ান্ত হওয়ার পর আগামী সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত আদেশ হতে পারে। যদি এক মাস সময় বাড়ানো হয় তাহলে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। ১৫ দিন বাড়ানো হলে রিটার্ন দাখিল করার শেষ সময় হবে আগামী ১৫ জানুয়ারি। আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। গত মাসের শেষ দিকে এসে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়ায় এনবিআর। অর্থাৎ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে।
এনবিআরের তথ্যমতে, চলতি ২০২৫-২৬ করবছরে এখন পর্যন্ত ৪২ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। জমা দিয়েছেন ২৬ লাখের বেশি। তার মানে, আরও প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ রিটার্ন জমা দেওয়া হয়নি। এখনও প্রতিদিন নতুন নতুন নিবন্ধন করা হচ্ছে। দৈনিক গড়ে ১৫ হাজারের বেশি করদাতা রিটার্ন জমা দিতে নিবন্ধন করছেন বলে জানা গেছে। এ বছর থেকে অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে কোনো কাগজপত্র বা দলিলাদি আপলোড করতে হয় না। শুধু ওই সব প্রয়োজনীয় কাগজের তথ্য দিতে হয়। ফলে অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া আরও সহজ হলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে করদাতাদের সুবিধা দিতে রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। তাছাড়া এ বছর অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করায় করদাতাদের প্রস্তুতির বিয়টিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আবার করদাতাদের পক্ষ থেকে অনুরোধও আসছে। সব বিষয়ে বিবেচনা করেই সময় বাড়ানোর ব্যাপারে সরকার ইতিবাচক। তবে সময় ১৫ দিন নাকি এক মাস বাড়বে সেই ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।গত রোববার এক অনুষ্ঠানে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেছিলেন, সরকার চাইলে ই-রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়তে পারে। যেহেতু এবার অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেটি হয়তো সরকার বিবেচনা করতে পারে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, আয়কর ও ভ্যাট আদায় পুরোপুরি অনলাইনে হলে আদায় ও অডিট প্রক্রিয়া দুটোই সহজ ও স্বচ্ছ হবে। অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া হলে সরকারের আয় বাড়বে। এ জন্য আগামী বছর রিটার্ন দাখিলের জন্য নতুন অ্যাপস তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল আরও সহজ হবে।এ বছর এনবিআর এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে চার ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা ছাড়া বাকি সব স্বাভাবিক করদাতার ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চার ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা হলেন ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব প্রবীণ, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি, মৃত করদাতার আইনগত প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিগত করদাতা। তবে যারা এই বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তারাও ইচ্ছা করলে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
কী কী তথ্য লাগে
অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার ক্ষেত্রে বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌর করের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। তবে এসব কাগজপত্রের হার্ডকপি জমা দিতে হবে না। শুধু সেগুলোর তথ্য লাগবে।ই-রিটার্ন জমার আগে প্রথমে করদাতাকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন নিতে করদাতার নিজের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও বায়োমেট্রিক করা মোবাইল ফোন নম্বর লাগবে। অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাপ্তি রসিদ মিলবে।
ঘরে বসেই রিটার্ন জমা
করদাতারা ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, রকেট, নগদ অথবা অন্য কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই কর পরিশোধ করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার দ্রুত সমাধানে এনবিআর একটি কল সেন্টার (০৯৬৪৩ ৭১ ৭১ ৭১) চালু করেছে, যেখানে করদাতারা তাৎক্ষণিক টেলিফোনিক সহায়তা পাচ্ছেন। পাশাপাশি, এনবিআরের ওয়েবসাইট এবং দেশের প্রতিটি কর অঞ্চলে স্থাপিত ই-রিটার্ন হেল্প ডেস্ক থেকেও সরাসরি সেবা পাওয়া যাচ্ছে।