
প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর চালু হয়েছে ভ্যাট রিফান্ড। ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে অনলাইনে ভ্যাট রিফান্ড চালু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত হয়রানি ও অনিয়ম দূর করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। অনলাইন পদ্ধতিতে ভ্যাট রিফান্ড গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়ে অনলাইনে ভ্যাট রিফান্ড চালু করায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে। চাপের কারণে সিস্টেমে ঠিকমতো আবেদন করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে দায় চাপানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ও এনবিআর।এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর রিফান্ড চালু হলেও আইভাস সফটওয়্যার (ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম) আবেদনের চাপ সামলাতে পারছে না। প্রায়ই সফটওয়্যার হ্যাং হচ্ছে। এ ছাড়া পরিপত্রে উল্লেখিত দলিলাদি আপলোড করতে না পারলে আবেদন গ্রহণও করছে না। এ কারণে মূলধন আটকে যাওয়ায় বিনিয়োগের ওপর চাপ বাড়ছে।
গত ১০ নভেম্বর ভ্যাট রিফান্ডের নতুন পরিপত্র জারি করে এনবিআর। এতে বলা হয় আগাম কর পরিশোধের সময়সীমা ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়নি, শুধু সেসব আবেদন অনলাইনে করা যাবে। পরে পুরনো আবেদন পর্যায়ক্রমে সিস্টেমে আপগ্রেড সাপেক্ষে অটোমেটেড পদ্ধতির আওতায় আনা হবে। ৬ মাসের বেশি পুরনো রিফান্ড আবেদন করা যাবে না। সেসব আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেমের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে আগের সব ম্যানুয়াল চেকও মাঠ পর্যায়ের অফিস থেকে ফেরত নেওয়া হয়েছে।জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সারা দেশে ৭১১টি আবেদনের বিপরীতে রিফান্ড আটকে আছে ১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার বেশি। একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়ে অনলাইনে ভ্যাট রিফান্ড চালু করায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে। চাপের কারণে সিস্টেমে ঠিকমতো আবেদন করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও এনবিআর একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
ভ্যাট পরামর্শকরা বলেছেন, সাধারণত আইন-বিধি বা প্রজ্ঞাপন জারির পর তা কার্যকর হয়। এসবের ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেওয়া যায় না বা হয় না। অথচ গত ১০ নভেম্বর ভ্যাট রিফান্ড পরিপত্রে সেটিই করা হয়েছে। পরিপত্র জারি করে বলা হয়েছে ৬ মাস আগের আবেদন নিষ্পত্তি করতে কী কী কাগজপত্র লাগবে। এ জন্য ২৪টি শর্তসংবলিত একটি চেকলিস্ট অনলাইনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কাগজপত্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের পক্ষে কখনোই সংরক্ষণে রাখা সম্ভব নয়।সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আইভাস সিস্টেম পুরোপুরি আপগ্রেড না করে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করায় রিফান্ড পেতে বিড়ম্বনা বেড়েছে। প্রথমত, সিস্টেম বেশির ভাগ সময় ডাউন থাকায় আবেদন আপলোড করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, আবেদনের সঙ্গে যেসব দলিলাদি সংযুক্তের শর্ত দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতিতে ঘাটতি আছে। বড় ও কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এসব দলিলাদি সংগ্রহে রাখলেও ছোট ও নন-কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা প্রায় অসম্ভব। যদিও এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভ্যাট রিফান্ড গ্রহণের ক্ষেত্রে আগেও পরিপত্রে উল্লেখিত কাগজপত্র জমার বিধান ছিল। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা হয়তো সেগুলো যথাযথভাবে যাচাই করতেন না। অনলাইনে রিফান্ড চালু করা হয়েছে কেবল স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে। নতুন পদ্ধতিতে করদাতারা অনলাইনে ভ্যাট রিটার্নের মাধ্যমে তার প্রাপ্য ভ্যাট রিফান্ডের আবেদন দাখিল করতে পারবেন।