ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, প্রতি বছর ২০ লাখ লোককে করের আওতায় আনতে হবে, যেন যারা কর দিচ্ছে শুধু তাদের উপরই করের বোঝা না পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ পাচারকারীদের ধরার ব্যাপারেও উৎসাহিত করতে হবে।মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।পিআরআইর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পিআরআইর সেন্টার ফর ম্যাক্রোইকোনমিক অ্যানালাইসিস (সিএমইএ) অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের (ডিএফএটি) সহযোগিতায় মান্থলি ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই) এর জুলাই-আগস্ট সংস্করণের প্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক এবং বেসরকারি পর্যায়ের নেতারা।অনুষ্ঠানের সভাপতি ও পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি চ্যালেঞ্জ। টেকসই সামষ্টিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে তিনি গভীরতর সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পিআরআই-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান মূল উপস্থাপনায় বলেন,সংকোচনমূলক নীতি ও ব্যাংক খাতে সুশাসনের মাধ্যমে যে স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে কেবল তখনই, যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ও স্বায়ত্তশাসনে বিনিয়োগ করা হবে।তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ায় আর্থিক অল্পসংখ্যক গোষ্ঠী দায়মুক্তির সঙ্গে অনিয়ম চালিয়ে গেছে, যা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে এবং জনআস্থা দুর্বল করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া এবং একটি শাসন কাঠামো গ্রহণ করা, যা ইংল্যান্ডের ব্যাংক বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সমতুল্য। এতে আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি. রহমান উল্লেখ করেন,চাকরির সুযোগ সম্প্রসারণ এবং দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ আমাদের জনমিতিক সুফল কাজে লাগানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বিত পদক্ষেপ ও দৃঢ় সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পবকে বলেন, ব্যাংকিং, কর ব্যবস্থা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্রশাসনিক সংস্কারগুলো দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনতে পারে যদি এগুলো অব্যাহত থাকে। তবে এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আগামী সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।তিনি সতর্ক করে বলেন, সংস্কারের সুযোগ খুবই বিরল এবং সহজেই হারিয়ে যেতে পারে। তবে বাংলাদেশ তার সংস্কারযাত্রা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করার জন্য আসন্ন উন্নয়ন অংশীদারিত্ব কর্মপরিকল্পনা এবং আরও গভীর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।