TAXNEWSBD
অর্থ পাচার মামলার ভয়ে দেশে ফিরল ১১০০ কোটি টাকা
সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:৩২ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

মামলার ভয়ে শেষ পর্যন্ত ২১টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক পাচার করা টাকা দেশে ফেরত এনেছেন। অর্থের পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলার বা ১১শ কোটি টাকার বেশি। রপ্তানির আড়ালে এসব অর্থ পাচার করা হয়। সিআইডি তদন্ত শুরু করার পর চাপে পড়ে পাচারকারিরা মামলা থেকে বাঁচতে এ টাকা ফিরিয়ে আনে। ঘোষিত রপ্তানি মূল্য হিসাবে যা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশে আনার কথা। কিন্তু অনেকে কিছু অর্থ দেশে এনে বাকি টাকা বিদেশে রেখে দেয়। তবে এ তালিকায় থাকা রপ্তানিকারকদের মধ্যে এখনো দেশে ফেরত আসেনি ৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার বা টাকার অঙ্কে ৮ কোটি ৯১ লাখ। গণ-অভ্যুত্থানের পর সিআইডি জোরালো অনুসন্ধান শুরু করলে বেশির ভাগ টাকা গত এক বছরে ফিরে আসে।

এদিকে এখনো প্রায় ১০০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে সিআইডি। অন্যদিকে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে তদন্ত করে ৩ হাজার ১১১ কোটি টাকার সমপরিমাণ সম্পদ ফ্রিজ, ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত করা হয়। সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর বিদেশে অর্থ পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে। এরপর পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কার্যকর উদ্যোগ নেয় সিআইডি। রপ্তানিমুখী প্রায় ১০০ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে একাধিক দল। অর্থ পাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে ১৭টি মামলা করা হয়। এরই মধ্যে অনুসন্ধানের তালিকায় থাকা একাধিক প্রতিষ্ঠান রপ্তানির আড়ালে পাচার করা অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসনে বাধ্য হয়। অর্থাৎ রপ্তানি মূল্যের আড়ালে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে শুরু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রত্যাবাসিত শব্দটিকে রপ্তানি আয় হিসাবে উল্লেখ করে। এটি মূলত রপ্তানিকারকদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফেরত আনাকে বোঝায়। রপ্তানিকারককে সাধারণত পণ্য রপ্তানির ১২০ দিনের মধ্যে রপ্তানি মূল্য দেশে আনতে হয়, যদিও এই সময়সীমা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ২১০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যায়। তবে এই নিয়মের ব্যত্যয় হলে রপ্তানিকারকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সিআইডির পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, অনুসন্ধানের মুখে গত কয়েক বছরে অন্তত ২১ প্রতিষ্ঠানে তাদের পাচার করা রপ্তানি মূল্য ফিরিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রায় যা ৯ কোটি ২১ লাখ ৬৪ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। বর্তমান টাকার মূল্যে এর পরিমাণ ১ হাজার ১২২ কোটি ২৩ লাখের বেশি। আর এসব প্রতিষ্ঠান পাচার করে ৯ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ডলারের বেশি। বাকি ৭ লাখ ৩০ হাজার ডলারের বেশি অর্থ এখনো ফেরত আসেনি। এরমধ্যে ক্যামলেট ফ্যাশনসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি মূল্য ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার ডলার, ফেরত এনেছে ৩০ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৬ ডলার। এটিএস পার্ল লিমিটেড রপ্তানি করেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫১২ ডলারের পণ্য, বিপরীতে ফেরত এনেছে ৬৮ হাজার ২৩২ ডলার। এএন্ডবি আউটওয়ার লিমিটেডের রপ্তানি মূল্য ৩ লাখ ৮০ হাজার ২৯ ডলার, আর প্রত্যাবাসন হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭ ডলার।

অন্যদিকে মামলার ভয়ে কুন্তং অ্যাপারেলসহ ৪টি প্রতিষ্ঠান তাদের পাচার করা পুরো রপ্তানি মূল্যই ফেরত এনেছে। যার পরিমাণ ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৭৬ ডলার। এছাড়া বিডি ডিজাইন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান তাদের পাচারের পুরো টাকা ফিরিয়েছে, যার পরিমাণ ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৭৬ ডলার।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির একজন কর্মকর্তা  বলেন, ‘প্রায় ১০ কোটি ডলার অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি মূল্যের সিংহভাগই ফেরত এসেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর অনুসন্ধান শুরুর করায়। আমাদের অনুসন্ধানের চাপে পড়ে যেসব প্রতিষ্ঠান পাচারের অর্থ ফিরিয়ে এনেছে তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। আর যারা ফেরত আনেনি তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যারা একই প্রক্রিয়ায় বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে কারসাজির মাধ্যমে রপ্তানি মূল্য আড়াল করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শেষে মামলা করা হবে। ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক ১৭টি মামলা করা হয়েছে, এসব মামলা নিয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।

এদিকে সিআইডির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১১১ কোটি ৯৭ লাখের বেশি টাকা ফ্রিজ, ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ফ্রিজের পরিমাণ ৮১৩ কোটি ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৫৬ টাকা। বাজেয়াপ্ত ৭৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬২৪ টাকা। এছাড়া ক্রোক করা হয়েছে ২ হাজার ২১৯ কোটি ৮৫ লাখ ২৯ হাজার ৪৪০ টাকা মূল্যের সম্পদ। যার মধ্যে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৮ একর জমি, ২৯টি বাড়ি, ১১টি ফ্ল্যাট, ৩টি মার্কেট, ২১টি মিনিবাস, ২টি মাইক্রোবাস, ৫টি কার ও ১ লাখ স্কয়ার ফিট কমার্শিয়াল স্পেস। সিআইডি এসব সম্পদ দলিল মূল্যে উল্লেখ করেছে। যার প্রকৃত মূল্য কয়েকগুণ। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি হয়ে যাওয়া ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে প্রত্যাবাসিত ডলারের পরিমাণ ৩৪ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৪০৮ কোটি টাকা প্রায়। এদিকে তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর বেক্সিমকোর ক্রোককৃত সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- ঢাকার দোহারে ২০ একর ৫২ শতক জমি, রাজধানীর গুলশান এলাকায় ৬ হাজার ১৮৯ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট ও একই এলাকার একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট।