তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দ্রুত প্রত্যাহার চেয়েছেন বস্ত্র ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যখন তুলা আমদানি বাড়ানোর চাপ রয়েছে, তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বস্ত্র খাত, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, টেরিটাওয়েল, হোমটেক্সটাইলসহ সমজাতীয় সব পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বিপন্ন হবে। এর প্রভাব পড়বে ব্যাংক-বীমা খাতেও। তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ এআইটি আরোপ এবং দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত সুতার ওপর কেজিপ্রতি ৫ টাকা ভ্যাট আরোপের নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরতে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আগামীকাল সোমবারের মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি অমল পোদ্দার, টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সেপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) সভাপতি হোসেন মেহমুদ, বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) সভাপতি মোহাম্মদ আইয়ুব প্রমুখ। প্রসঙ্গত, এবারের বাজেটে তুলা আমদানির ওপর ২ শতাংশ এআইটি আরোপ করা হয়, যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। অন্যদিকে দেশীয় বস্ত্রশিল্পের জন্য সুতা উৎপাদনে কেজিতে ৫ টাকা ভ্যাট আরোপ করা হয় ২ জুন বাজেট পেশের দিন।
.ওই দিন থেকে নতুন এ হার কার্যকর হয়। আগে ৩ টাকা হারে ভ্যাট আরোপ ছিল। তৈরি পোশাকশিল্পের নিট পণ্যের সুতা ও বস্ত্রের প্রায় শতভাগ জোগান দেয় বিটিএমএ সদস্যরা। ওভেন খাতে এ পরিমাণ ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া দেশীয় চাহিদার প্রায় শতভাগ জোগান দেওয়া হয়। এ কারণে বস্ত্রশিল্পের সমস্যা রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প এবং স্থানীয় বস্ত্রশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনের সদস্যদের ১ হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন ডলার। বিটিএমএ সভাপতি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, অনেকবার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। তবে আজকের বিষয়টি ভীতিকর এবং ভয়াবহ। নিজের কারখানার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ডেনিম তৈরিতে নিজের স্পিনিং কারখানা থেকে সুতা নিতে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। অথচ ভারত থেকে আনতে কিছুই লাগে না। দামেও কম। তিনি প্রশ্ন রাখেন, তাহলে কি সরকার ভারতের শিল্প রক্ষায় এবং সে দেশের কর্মসংস্থানে কাজ করছে? শওকত আজিজ রাসেল বলেন, এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের কর্মসংস্থান, বিদেশি মুদ্রা আহরণের প্রধান উৎসে কোন ধরনের প্রভাব পড়বে তা ভেবে দেখুন। কারখানা বন্ধ হওয়ার এই প্রক্রিয়া অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। তিনি বলেন, আগে শিল্প বাঁচান, তারপর উন্নয়ন প্রকল্প বা অন্য কিছু করেন। তাঁর আশা, এ সংবাদ সম্মেলনের পর সরকার বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করবে এবং আগামীকাল সোমবার প্রথম কর্মদিবসেই তুলা আমদানিতে এআইটি এবং ৫ টাকা ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেবে।
.বিটিটিএলএমইএর সভাপতি বলেন, তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ এআইটি আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্যের বিষয়টি হয়তো সরকার হিসাব করেনি। দেশটি থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রতিশ্রুতি সরকার এখন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর বন্দর থেকে তুলা ছাড় করছেন না শিল্প মালিকরা। সমস্যা সমাধানে বিটিএমএ এবং তৈরি পোশাক খাতের সংগঠনগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি। কটন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, দেশে জনপ্রতি বছরে তুলার চাহিদা দুই কেজি। চাহিদার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। পোশাক রপ্তানিতে তুলার বড় একটা চাহিদা তো আছেই। এ রকম একটি কাঁচামাল আমদানিতে ২ শতাংশ এআইটি আরোপের আগে এর পরিণাম ভেবে দেখেনি সরকার। বস্ত্রকল বন্ধ হলে তৈরি পোশাক বন্ধ হতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে না। এর প্রভাবে ব্যাংক-বীমা বন্ধ হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। তিনি বলেন, বস্ত্র ও পোশাক খাতে প্রতিবেশী একটি দেশের আগ্রাসী নীতির বিপরীতে সরকার আত্মঘাতী নীতি নিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিটিএমএর পরিচালক মো. খোরশেদ আলম, আবদুল্লাহ আল মামুন, রাজিব হায়দার, সালেহউজ্জামান খান প্রমুখ।