TAXNEWSBD
ডলার অর্থনীতির মূল সমস্যা মূল্যস্ফীতি, ডলার ও তারল্যসংকট
মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩ ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট ও তারল্যসংকট এগুলোই এখন অর্থনীতির মূল সমস্যা। দেশে ডলার সংকট প্রকট। তা যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে যেসব চাপ আছে, তা প্রশমনে যথাযথ নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা থাকা দরকার বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। আহসান মনসুর বলেন, অর্থনীতিতে বাজারব্যবস্থার কার্যকারিতা কী, তা যথাযথভাবে উপলব্ধি করে মুদ্রানীতি করা প্রয়োজন। তা না হলে অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব পড়বে। কিন্তু অপরিবর্তিত সুদহারের কারণে দেশের সব খাত মুনাফা হারানোর ঝুঁকির মুখে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। খবর বিজ্ঞপ্তি।

গতকাল ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত মুদ্রানীতি নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। আরও উপস্থিত ছিলেন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম, সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, আইসিএবির সাবেক প্রেসিডেন্ট জামালউদ্দিন আহমেদ, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা ও দৈনিক সমকালের বাণিজ্য সম্পাদক জাকির হোসেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন আইসিএবি কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির এফসিএ।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশে অপরিবর্তিত সুদহার সমস্যা আরও জটিল করে তুলেছে। বৈশ্বিক বিবেচনায় ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিয়োগ হারের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। অর্থ পাচার বড় আকার ধারণ করেছে। সঞ্চয়ের হার ৫ দশমিক ৫ এ নেমে এসেছে, যেটি আগে ছিল ১৬ দশমিক ৫ থেকে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মনে করেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সুশাসন খুবই জরুরি। মুদ্রানীতিতে কোনো ধরনের অসামঞ্জস্য রাখা যাবে না।

আইসিএবি প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি। ২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবণতা এবং ২০২৩ সালের দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে এটি আশাব্যঞ্জক। সুদহার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলে মুদ্রানীতি ফলপ্রসূ হতে পারে না বলে মনে করেন দৈনিক সমকালের বাণিজ্য সম্পাদক জাকির হোসেন। অবশ্য এই নির্দিষ্ট সুদহার পর্যায়ক্রমে উঠিয়ে নেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক ইঙ্গিত দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে পারলে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা সম্ভব। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে বলে মত দেন মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা। কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান। বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি এই শিল্পের বিকাশ না হলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে না। তাঁর অভিযোগ, চলমান অর্থনৈতিক সংকটে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা যেখানে মুনাফা হ্রাস করছেন, সেখানে আমাদের দেশে হচ্ছে ঠিক তার বিপরীত।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ব্যবস্থাপনার দিক থেকে মুদ্রানীতি ছয় মাস পরপর প্রণয়ন করা যুক্তিসংগত। বর্তমানে ব্যাংকের সুদহার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম, যা অর্থনীতির জন্য স্বাভাবিক নয়। তবে বর্তমান মুদ্রানীতির বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতির হার কমানো। তবে শুধু নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি হ্রাস করা সম্ভব হবে না। কারণ, বিষয়টি বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। সে জন্য তাঁরা বাজারব্যবস্থা নজরদারিতে জোর দেন।