দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসেরসিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান এমপিদের
No icon

করপোরেট কর কমছে বাড়ছে সম্পদ কর

উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর আসছে। সেটা হলো, টানা তৃতীয়বারের মতো করপোরেট কর কমতে যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর হ্রাসে চিন্তাভাবনা চলছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে করপোরেট কর পৌনে দুই থেকে দুই শতাংশ হারে কমানো হতে পারে। কর কমানোর এই সুবিধা শুধু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানি পাবে। অন্য ক্ষেত্রে করপোরেট কর অপরিবর্তিত থাকে। বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির (পাবলিকলি ট্রেডেড) করপোরেট করহার সাড়ে ২২ শতাংশ। এই হার কমে সাড়ে ২০ থেকে পৌনে ২১ শতাংশ হতে পারে।

অন্যদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির (পাবলিকলি ট্রেডেড নয়) ক্ষেত্রে এখন করপোরেট করহার ৩০ শতাংশ। এটি কমে ২৮ থেকে সোয়া ২৮ শতাংশ হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মূলত বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে করপোরেট করহার কমানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। অবশ্য গত দুই বছর করপোরেট কর কমানো হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাময়িক হিসাবে দেখা গেছে, চলতি মূল্যে আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে সরকারি বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে বছর শেষে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়বে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে করপোরেট করের অন্যান্য ক্ষেত্রে করহার অপরিবর্তিত থাকছে। তবে একক ব্যক্তির কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর ২৫ শতাংশ থেকে কিছুটা কমানোর সম্ভাবনা আছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, এই অঞ্চলে করপোরেট করহার ২০-২২ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে এই হার ৩০ শতাংশ, যা এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ। এই করহার দেখে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আসবেন না। আবার স্থানীয় শিল্পায়ন কতটা হলো, তা দেখেই বিদেশিরা দেশে আসেন। এসব বিবেচনায় করপোরেট কর কমানো দরকার।

মোবাইল ফোন কোম্পানি, সিগারেট ও তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করে পরিবর্তন আসছে না। বর্তমানে মোবাইল কোম্পানির করপোরেট করহার ৪৫ শতাংশ। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির করহার ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে সিগারেট ও তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের করহার ৪৫ শতাংশ।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না হলে ৪০ শতাংশ কর দিতে হয়। তবে নতুন কয়েকটি ব্যাংকের জন্য বিশেষ কর ছাড় আছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এসব শ্রেণির প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই ৭০-৮০ শতাংশ করপোরেট কর আদায় করা হয়।

মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাবে এনবিআরে নিবন্ধিত (টিআইএন) করদাতা কোম্পানির সংখ্যা ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২৮টি। গত পৌনে দুই বছরে প্রায় ৯০ হাজার নতুন কোম্পানিকে টিআইএন দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের নিয়ম অনুযায়ী, লাভ-লোকসাননির্বিশেষে সব কোম্পানির রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ২৮ থেকে ৩০ হাজার কোম্পানি রিটার্ন দেয়। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০২০-২১) ৫২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকার করপোরেট কর আদায় হয়েছে এবং রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৯ হাজার ৭৮৫টি কোম্পানি।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে করপোরেট কর কমানো হলেও রিটার্ন জমায় বেশি জোর দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ঘরে বসে কোম্পানিগুলো যাতে রিটার্ন জমা দিতে পারে, সে জন্য নতুন সফটওয়্যার তৈরি করছে এনবিআর।